ঢাকা, বুধবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

চায়ের ভাগ্যে কাস্তের পোচ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৭
চায়ের ভাগ্যে কাস্তের পোচ পঞ্চগড়ের চায়ের ভাগ্যে কাস্তের পোচ

পঞ্চগড় থেকে: গত দুই বছরে বদলে গেছে পঞ্চগড়ের অর্থনীতি। সমতল ভূমিতে চায়ের চাষ করে এ অঞ্চলের মানুষ গড়ে তুলেছে ঈর্ষণীয় অর্থনীতি। একসময়কার জমিদারদের আরাম আয়েশের চা বাগান গড়ে উঠেছে কৃষকের আঙ্গিনায়।

তবে হ্যান্ড প্লাকিংয়ের (হাত দিয়ে পাতা ছেড়া) বদলে কাস্তে দিয়ে প্লাকিং করায় চা এর দাম ও মান দু’টোই শঙ্কটের মুখে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে এ অঞ্চলের চা ভাগ্যের কপালে দুর্ভোগ নেমে আসবে।

 

কাস্তে প্লাকিংয়ের কারণ হিসেবে শ্রমিকের সংকট, অদক্ষতা এবং কম পারিশ্রমিককেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

পঞ্চগড়ের চা সংস্কৃতি নতুন। দুই থেকে তিন একর জমি নিয়েই হচ্ছে চা চাষ। আবার বড় আকারের চা বাগানও গড়ে উঠেছে। তবে দু’টি পাতা একটি কুড়ির তুলনায়, ৫ থেকে ৬ পাতা পর্যন্ত চায়ের ডাল ভাঙাতেইই আগ্রহ বেশি চাষিদের।

নাদিম টি এস্টেটের সুপারভাইজার সাজিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এখানে চা শ্রমিকের সংকট রয়েছে। তাদের প্রতি সপ্তাহে পাওয়া যায় না। শ্রমিকদের বলার পরও তারা ৫ থেকে ৬ পাতার ডাল ভাঙছে। তখন ১৫ থেকে ২০ দিন পর কাস্তে দিয়ে কাটতে হয়। এ কারণেই এখানে চায়ের পাতার দাম পাওয়া যায় কম। মৌসুম অনুযায়ী প্রতি কেজি চা পাতার জন্য ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।  

পঞ্চগড়ের চায়ের ভাগ্যে কাস্তের পোচক্ষুদ্র চাষি মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, এখানে পাথরের শ্রমিক বেশি। সেখানে দৈনিক ছয়শ থেকে আটশ টাকা আয় করা যায়। কিন্তু এখানে দৈনিক দেড়শ থেকে দুশো টাকার বেশি আয় করা যায় না। এছাড়াও গাছের ডালের ডগার শীর্ষের আড়াই পাতা নিলে শ্রমিকদের পরিশ্রম বেশি হলেও আয় কম হয় বলে জানান তিনি।  

পঞ্চগড়ে চায়ের পাতার মূল্য নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। চলতি মৌসুমে ২০ টাকা কেজি দরে পাতা কিনছে কোম্পানিগুলো। দাম নির্দিষ্ট করে দেয়ায় আর হ্যান্ড প্লাকিংয়ে আগ্রহ নেই চাষিদের। বরং ওজন বৃদ্ধির জন্য কাস্তের ব্যবহারই বেশি।  

পঞ্চগড়ের মৈত্রী টি ইন্ড্রাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবুল মনসুর বাংলানিউজকে বলেন, এখানে দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। বারবার কোম্পানি থেকে বলা হলেও শ্রমিকরা ওজন বাড়ানোর জন্য বেশি পাতা কাটছে। কেজি দরে পাতাকে মেশিনে ঢুকালে বড় পাতা ও ছোট পাতা সব একসঙ্গে ঢুকানো হয়। এ চা আবার অকশন মার্কেটে নিলে ভালো দাম পাওয়া যায় না।  

তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে ফ্যাক্টরিগুলো লসের মুখে পড়বে। তাহলে এখানে ব্যবসা সম্ভব হবে না। আর কোম্পানি চলে গেলে এখানে চাষও কমে যাবে। তবে মৌসুমে চা পাতার তুলনায় অনেক সময় ফ্যাক্টরিগুলোর জমা ব্যবস্থাও কম হয় বলে জানান।  

এ বিষয়ে পঞ্চগড় চা বোর্ডের খামার ব্যবস্থাপক জাহিদ ইমাম বলেন, চাষিরা যদি কুড়ি থেকে আড়াই পাতা নিতে পারতো, তাহলে দাম বেশি পেতো। কাস্তের ব্যবহার করার কারণে যেমন বয়স্ক পাতা ফ্যাক্টরিতে যাচ্ছে, তেমনি গাছে নতুন পাতাও গজাতে পারছে না। আমরা চাষিদের বলেছি, কিন্তু কাস্তের ব্যবহার কমাচ্ছে না। সরকার থেকে মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।  

তবে চাষিদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, পাতার দাম কম পাওয়াতে আড়াই পাতা দিয়ে পোষায় না। দামতো কেজি প্রতি ২০ টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। কাস্তে চালাতে বাধ্য হচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৭
এমএন/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।