বডির ভেতরে চারকোনা আকৃতি করে শক্তভাবে বেঁধে নেওয়া হয় ত্রিফল বা পলিথিন। এরপর তার ভেতরে শ্যালোমেশিন বা নলকূপের ঠাণ্ডা পানি দেওয়া হয়।
জেলেরা পুকুর থেকে জালে মাছ উঠানোর পর গাড়ির সেই পুকুরে ভরানো হয়। পানিতে ঢেউ সৃষ্টি করার জন্য ভেতরে এক বা একাধিক সীসার পাতিল রাখা হয়। সে অনুযায়ী বডির ভেতরে মানুষ থাকে। পাতিলের ভেতর পা দিয়ে সেই মানুষটি বিরামহীন নাড়াতে থাকেন পাতিল।
এভাবে জ্যান্ত মাছ লোড দিয়ে করে গাড়ি ছুটতে থাকে আড়তের উদ্দেশে। আড়তে পৌঁছানো থেকে বিক্রি পর্যন্ত কোনো মাছ মরে না। রুই, মৃগেল, কাতল, সিলভার, বিগহেড, গ্রাস কার্পসহ বড় বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিক্রির ক্ষেত্রে চাষিরা এ পন্থা অবলম্বন করেন।
শুক্রবার (০৫ মে) সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মাছের আড়তে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।

বাংলানিউজের সঙ্গে (এ প্রতিবেদক) আলাপকালে তিনি জানান, এসব মাছ স্থানীয়ভাবে বাংলা মাছ হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৯মাস পর একবার বিক্রির জন্য মাছ উঠান তিনি। এসব মাছ যারা চাষ করেন তারা সাধারণত ৫০০ গ্রামের নিচে মাছ পুকুরে ছাড়েন না।
একেক অঞ্চলে একেক ধরনের মাছ চাষ হয়। এরমধ্যে রাজশাহী ও নাটোর অঞ্চলের সিংহভাগ চাষি বাংলা মাছ চাষ করেন। আর বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের চাষিরা মিশ্র (পাঙ্গাস, তেলাপিয়ার সঙ্গে বাংলা মাছ) চাষ করেন।
তিনি আরো জানান, বাংলা মাছের চাষিরা সাধারণত মাছ বড় না করে বিক্রি করেন না। আড়তে সব সময় জ্যান্ত মাছের দাম বেশি। এ কারণে এসব মাছ চাষিরা বিশেষ ব্যবস্থায় আড়তে জ্যান্ত মাছ বিক্রি করতে আনেন। এরপরও কিছু মাছ মরে যায়।
ভটভটি চালক নাছির উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, অনেকেই পানিতে ঢেউ সৃষ্টি করতে গাড়ির ওপরে বিশেষ ব্যবস্থায় ছোট শ্যালোমেশিন ব্যবহার করেন। বডির ভেতরে রাখা পানি মেশিনের সাহায্যে উঠানো হয়। পাশাপাশি সেই পানি সঙ্গে সঙ্গে বডির ভেতরে ফেলা হয়। পিকআপ ভ্যানে এ পদ্ধতি বেশি অবলম্বন করা হয়- যোগ করেন নাছির উদ্দিন।
তার সঙ্গে আলাপকালে পাতিলের ভেতর পা রেখে পানিতে ঢেউ দিচ্ছিলেন ইউনুছ আলী। আর মাঝে মধ্যে বডির ভেতর থেকে সেই জ্যান্ত মাছ নামিয়ে নিচ্ছিলেন আড়তের শ্রমিক শামীম। পাতিলে ভরে তা পাল্লায় উঠিয়ে দিচ্ছিলেন। ব্যাপারী দাম হাঁকাহাঁকি করে কিনছিলেন সেই জ্যান্ত মাছ।