বছরখানেক আগেও ভোর থেকেই মাছ ধরতে নৌকা নিয়ে ধলেশ্বরীতে ছুটতেন জেলেরা। কেউ বা আবার শখের বসে তীরে বসে ছিপ ফেলতেন।
কিন্তু বর্তমান চিত্র পুরোই ভিন্ন। সকালে তেমন কোনো মাছ ধরার নৌকা দেখা যায় না ধলেশ্বরী নদীর বুকে। আগে গ্রীষ্মকালে সকাল হলেই নদীর তীরে হাঁটতে আসতেন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষেরা। কিন্তু এখন থাকে শুনশান নীরবতা।
মূলত হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্প নগরীতে থাকা ট্যানারির দূষিত বর্জ্যের কারণেই ধলেশ্বরীর এমন পরিস্থিতি। নদীটির চায়না ঘাটে দেখা যায়, একাধিক পাইপের মাধ্যমে ট্যানারির বর্জ্য পড়ছে ধলেশ্বরীতে। নদীর পানি কালো হয়ে গেছে। ধলেশ্বরীর নির্মল বাতাসে মিশে গেছে ট্যানারি বর্জ্যের দুর্গন্ধ।
দূষণের কারণে প্রায়ই মাছ মরে ভেসে ওঠে বলে জানান স্থানীয় আবদুল আজিজ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই নদীর মাছ খেয়ে আমাদের সন্তানরা মানুষ হইছে। কখনো মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার চালাইছি। কিন্তু এখন প্রায়ই মাছ মরে ভেসে ওঠে পানিতে। নদীর পানিতে আমরা আগে হাত-মুখ ধুইতাম। এখন সেই পানির কাছে যাওয়াই মুশকিল। পানিতে দুর্গন্ধ। আর পানি কালো হয়ে গেছে।
এই দূষণের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করছেন পরিবেশবিদ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যদি সত্যি ট্যানারির কারণে ধলেশ্বরী নদী দূষণ হতে থাকে তাহলে যে চাইনিজ কোম্পানিকে চামড়া শিল্পনগরের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত সরকারের। এ ধরনের ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে এলেও সরকারের নজরে কেন আসছে না তা বুঝতে পারছি না।
অন্যদিকে, চামড়া শিল্প নগরীকে কেন্দ্র করে ধলেশ্বরী নদীতে পর্যটকদের ভিড় হওয়ার কথা থাকলেও নদী দূষণের কারণে সেই সম্ভাবনাও বিলীন প্রায় বলে মন্তব্য করেছেন ধলেশ্বরী পাড়ে অবস্থিত শাহ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মমিনুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চামড়া শিল্পনগরী গড়ে ওঠার পর ধলেশ্বরীকে কেন্দ্র করে এখানে পর্যটকদের ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। শুরুর দিকে তা হচ্ছিলও বটে। কিন্তু ট্যানারিগুলো চালু হওয়ার পর থেকে বর্জ্যে নদীর পানি দূষিত হতে শুরু করেছে। নদীর দূষিত বাতাসের গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা। এ যেন দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা তৈরি হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পরিবেশ দূষণ রোধ করতেই রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি কারখানাগুলো সরিয়ে নেয়া হয় হেমায়াতপুরে। এখন হেমায়াতপুরের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ধলেশ্বরী নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে অর্থাৎ নদীটি মূলত বাংলাদেশের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৯২ কিলোমিটার ও গড় প্রস্থ ১৪৪ মিটার।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪১ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৭
ইউএম/এসআই