সব মিলিয়ে এ বন্যায় হাওরাঞ্চলে ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। হাওরের উন্নয়ন প্রকল্পটি সঠিক সময়ে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে এ ক্ষয়-ক্ষতির অধিকাংশই হতো না বলেও মত দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
তবে এবার প্রকল্পটিকে গুরুত্ব দিয়ে চার হাজার ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এ বরাদ্দ চেয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়টি।
রোববার (০৭ মে) পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, নতুন এডিপিতে হাওরে ডুবন্ত বাঁধের আকৃতি ফিরিয়ে আনা, পুনর্নির্মাণ, কম্পার্টমেন্টাল ডাইক, হাওরে ক্রসবাঁধ, পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো, ড্রেনেজ আউটলেট, গেটেড স্ট্রাকচার, ইরিগেশন ইনলেট তৈরি ছাড়াও সুরমা ও বৌলাই নদী খনন এবং অভ্যন্তরীণ খাল পুনঃখননকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নতুন অর্থবছরের এডিপিতে ৬০টি বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রকল্পও চলমান রয়েছে। যার মধ্যে ৫৬টি বিনিয়োগ এবং চারটি কারিগরি। হাওর সংক্রান্ত এ সকল প্রকল্পে যথাযথ বরাদ্দ দিয়ে ও ব্যয় করে বাস্তবায়নের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হাওর এলাকায় পরিদর্শন করছেন। নতুন বছরের বরাদ্দ কিভাবে ব্যয় করে হাওরে টেকসই উন্নয়ন করা যায়, সে পরিকল্পনাও চলছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ড. মোহাম্মদ আলী খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা এখন হাওর এলাকা পরিদর্শনে এসেছি। হাওরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই এডিপিতে বরাদ্দ চেয়েছি। হাওরের বাঁধগুলোর টেকসই উন্নয়ন কিভাবে করা যায়- সে চিন্তা তো থাকছেই। বরাদ্দ সঠিক সময়ে ব্যয় করে একটি পরিকল্পিত হাওর ব্যবস্থাপনা গড়তেও ছক কষছি’।
এর আগে হাওরে বাঁধ নির্মাণে চরম অবহেলা লক্ষ্য করা গেছে। গত ২০১৫ সালের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো বাঁধগুলো। এজন্য ৬৮৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিতে যথাসময়ে কাজগুলো সম্পন্ন হতে পারেনি। যার অনিবার্য পরিণতিতে সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। তবে এবার নতুন এডিপিতে হাওরের বরাদ্দ সঠিক সময়ে ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছে মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, নতুন এডিপিতে ছয়টি নীতিমালার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- শুষ্ক মৌসুমে নদ-নদীর প্রবাহ অব্যাহত রাখতে উজানের দেশগুলোর সঙ্গে অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টনে বাস্তবসম্মত বিধান, বন্যাপ্রবণ এলাকায় যথোপযুক্ত অবকাঠামো নির্মাণ করে ক্ষয়-ক্ষতি ও জানমালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, লাগসই প্রযুক্তি নির্ভর অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে সেচ এলাকা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জমির লবণাক্ততা দূরীকরণের মাধ্যমে ভূমি পুনরুদ্ধার এবং নতুন বরাদ্দ ব্যয় করে পানিসম্পদের বিভিন্ন বিষয়ে জরিপ চালানো।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের নদ-নদীর তলদেশ পলি জমে ভরাট হওয়ায় নদী খনন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে নৌ-চলাচল স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ভাঙন প্রতিরোধে খনন গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার নদী খননের ওপর গুরুত্বারোপ করে এসব উদ্যোগ নিয়েছে।
তবে হাওর রক্ষায় আগাম বরাদ্দ খরচ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছে হাওর অ্যাডভোকেসি প্লাটফর্ম। সংগঠনটির সদস্য সচিব আনিসুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘অর্থবছরের ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই টাকা ব্যয় করা দরকার। কারণ, এ সময় হাওর থেকে পানি নেমে যায়। শুষ্ক মৌসুম বলতে এ তিন মাসকেই বুঝি। মাটি খনন থেকে শুরু করে বাঁধ সংরক্ষণসহ হাওরের সকল কাজই অনেক কঠিন। কিন্তু স্বল্প সময়ে এসব কাজ বাস্তবায়নের মতো জনবল আমাদের নেই। আমার মনে হয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় যে টাকাই বরাদ্দ দিক না কেন, ব্যয় হবে না’।
‘হাওর রক্ষায় আমাদের পূর্ব পরিকল্পনা থাকতে হবে, আমরা যেনো শুষ্ক মৌসুমে বরাদ্দের টাকা খরচ করতে পারি। কিন্তু হাওর ব্যবস্থাপনায় সে পরিকল্পনা আমাদের নেই’।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর