এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রতি বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করতে এবং চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতেই এ উদ্যোগ নিচ্ছে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় এই বন্দর প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনা করবে।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ইজি বিজনেস বৈঠকে এ তথ্য জানান। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক সূত্র বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠক শেষে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান বাংলানিউজকে বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর ইতিবাচক চাপ বাড়ছে। এই চাপ মোকাবেলায় বন্দর ও নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। নতুন নতুন টার্মিনাল তৈরি হচ্ছে, পুরোনো টার্মিনাল সংস্কার হচ্ছে। বে-টার্মিনাল তৈরি হচ্ছে। ঠিক তেমনই মিরসরাই অর্থনৈতিক জোনকে কেন্দ্র করে মিরসরাই উপকূলে একটি স্বতন্ত্র বন্দর তৈরি করা হবে।
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক জোন তৈরি হচ্ছে মিরসরাইয়ে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র ৬৫ কিলোমিটার দূরে এ বন্দর অবস্থিত হলেও বিশাল এ জোন পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র একটি বন্দরের প্রয়োজন হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পুরোনো বন্দরের ওপর চাপ না বাড়িয়ে মিরসরাইয়ে একাধিক বন্দর টার্মিনাল করতে চায়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, প্রায় ৩০ হাজার একর জমির ওপর এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে মাত্র ৬৫ কিলোমিটার দূরে ইছাখালীর পীরের চর, সাধুর চর, শিল্প চর এবং চর মোশারফে পরিকল্পিত অঞ্চলের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধায়ন করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
প্রথমে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ৭ হাজার ৭১৬ একর জমি। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমুদ্র তীরে নতুন করে চর জেগে ওঠা আরও ১৫ হাজার একর জমি। প্রথম অবস্থায় চারটি মৌজায় ৬৩৯০ দশমিক ৯৬৭০ একর জায়গারও উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। এরমধ্যে পীরেরচর এলাকায় ১৩৯০ দশমিক ৪৩১৬ একর, সাধুরচর এলাকায় ১৬৬৪ দশমিক ১০৩৯ একর, শিল্পচর এলাকায় ১৮৫২ দশমিক ৫৩৮৫ একর এবং চর মোশাররফ এলাকায় ১৫০৪ দশমিক ২৯৩০ একর জমি রয়েছে।
মিরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে প্রথম পর্যায়ে সেখানে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ২০৩০ সালে এই সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা সরকারের। এই শিল্প জোনে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পূর্ণাঙ্গ আবাসিক এলাকা, সমুদ্রবন্দর, কম্পোজিট প্ল্যান্ট, আইটি পার্ক, ট্যুরিজম পার্ক, বিকল্প পোর্ট কানেকটিং সড়ক, রেললাইন নির্মাণ এবং ১০০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের করা হবে। সেইসঙ্গে বন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র জাহাজ নির্মাণ শিল্প, অটোমোবাইলসহ ২০০টির বেশি শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হবে। এছাড়া কয়েকটি ধাপে ৫০টি বিশেষায়িত উপ-অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫২৪ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৭
আরএম/এনটি