ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

প্রাণ যায় যায় ভৈরবের!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০০ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৭
প্রাণ যায় যায় ভৈরবের! মৃতপ্রায় ভৈরব নদ/ছবি: মানজারুল ইসলাম-বাংলানিউজ

নওয়াপাড়া থেকে: স্নিগ্ধ সকাল। ভৈরব নদের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে শালিকের ঝাঁক। মৃদু বাতাসে ঢেউ আছড়ে পড়ছে পাড়ে। সঙ্গে পাড় থেকে পড়ছে শিল্পবর্জ্য, পয়োবর্জ্য, আবর্জনা। তার মধ্যে আটকে ফুলে ফেঁপে রয়েছে মরা গরু। ‘অপয়া’ দাঁড়কাকেরা উল্লাস করে খাচ্ছে আর ছড়াচ্ছে গন্ধ। এটা শুধু গন্ধ, বর্জ্য কিংবা আছড়ে পড়া ঢেউ নয়, এটা যেন ভৈরবের অস্ফুট কান্না। যে কান্নার শব্দ পৌঁছাচ্ছে না কারও কানে।  

তবে নদের অদৃশ্য কান্নায প্রকৃতি, পরিবেশ-প্রতিবেশকে ভারী করে তুলছে। বাতাস ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।

নওয়াপাড়ার নৌ-বন্দর, শঙ্করপাশা খেয়াঘাট, বাজার খেয়াঘাট, পীর সাহেবের বাড়ির খেয়াঘাট, তালতলা খেয়াঘাট ও বেঙ্গল খেয়াঘাটে মঙ্গলবার (৯ মে) সরেজমিনে নদীর পাড়ে হেঁটে এ দৃশ্যের দেখা মেলে।

আশপাশের নদের পড়ের কোথাও কোথাও জমাট বেঁধেছে পুরু পলিথিনের স্তর। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই বুড়িগঙ্গার পরিণতি বরণ করতে হবে মেহেরপুর, দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা, কোটচাঁদপুর, চৌগাছা, বারবাজার, যশোর, বসুন্দিয়া, নওয়াপাড়া, ফুলতলা, দৌলতপুর, খুলনা ও বাগেরহাট এলাকার বুক দিয়ে বয়ে চলা ভৈরব নদকে।
ভৈরব নদে ভেসে আছে ময়লা-আবর্জনা/ছবি: মানজারুল ইসলাম
নওয়াপাড়া কলেজ রোডের কলেজ ছাত্র আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ভৈরব নদ কিছু অসাধু মানুষের জন্য আজ মরতে বসেছে। আসলে ভৈরবকে মানুষ ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করছে।

তিনি জানান, ভাঙাগেট আলিপুরে ভরাট হয়ে নদ এখন খাল হয়ে গেছে। কিছু অসাধু ব্যক্তি নেমেছে ভৈরব দখলের প্রতিযোগিতায়। ভৈরবের বুকে পানিবিহীন অংশে ঘর-বাড়ি, শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি করে করেছে কেউ কেউ। বিশেষ করে নওয়াপাড়া, এমনকি যশোর শহর এলাকায় অনেকে স্থায়ী পাকা স্থাপনাও গড়ে তুলছেন।
ভৈরব নদের তীরে ময়লার ভাগার/ছবি: মানজারুল ইসলাম
বাজার খেয়াঘাটে নোঙর ফেলা এম ভি মেঘনা কার্গোর কর্মচারী শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, নদের পানি এতো বেশি নোংরা আর ময়লা তা ব্যবহার করা যায় না। দ‍ুর্গন্ধ আসে পানি থেকে। তাছাড়া নদ ভরাট হয়ে যাওয়ায় জোয়ার ছাড়া কার্গো থেকে মাল লোড-আনলোড করা যায় না।

জানা যায়, ২৪৯ কিলোমিটার ভৈরব নদের অধিকাংশ স্থানই মৃতপ্রায়। স্থানভেদে ভৈরবের প্রশস্ততা কোথাও এক থেকে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তবে বর্তমানে সেটি মাত্র ২০ থেকে ২৫ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে।

ভৈরবের দু’পাড়ে হেঁটে দেখা যায়, শিল্পশহর খ্যাত নওয়াপাড়ায় নদীর তীরবর্তী সরকারি খাসজমি দখল করে পণ্যের গুদাম, ঘাট, আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।
ভৈরব নদ/ছবি: মানজারুল ইসলাম
নদের অনেক জায়গায় চর পড়ে বেশি উঁচু হয়ে উঠেছে। ওইসব জায়গায় পণ্যবাহী জাহাজ যাচ্ছে আটকে। দীর্ঘদিন খনন না করায় পণ্যবাহী বার্জ ও কার্গো ঠিকমতো নওয়াপাড়ায় আসতে পারছে না। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন।

যশোরের নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ভৈরব নদ খননের। যদিও কাজ শুরু হয়েছে, তবে বাজার এলাকায় খনন কাজ চলছে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৭
এমআরএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।