সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের অন্তর্গত গ্রাম এটি। ১০ সহস্রাধিক লোকের বসবাস এই গ্রামে।
এই জাফলংয়ে কয়েকটি গ্রামের মানুষ পাথর উত্তোলন থেকে নিজেদের বিরত রেখে জীবিকা নির্বাহের জন্য নিজেদের জড়িয়েছেন সবজি চাষে। গ্রামজুড়েই সবজির ফলন। এই ফসলই এখন জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন পিয়াইনপাড়ের এই গ্রামের মানুষের।
শুধু নয়াবস্তি গ্রামই নয়, পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের প্রতিবেশী গ্রামগুলোতেও বেড়েছে ক্ষেতকৃষি। পুরো ইউনিয়নের প্রায় ৬০ ভাগ মানুষই এখন কৃষিখেতে নিজেদের জড়িয়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, গ্রামের মাঠ-ঘাট জুড়ে রয়েছে সবুজ ফসলের সমারোহ। সেই ফসল তুলে গ্রাম ও শহরের বাজারে আনছেন কৃষকরা। নয়াবস্তি ছাড়াও আরও কয়েকটি গ্রামে রয়েছে এমন সবজি চাষ। এখানে মুলা, চালকুমড়া, ডাঁটা, বরবটি, করলা, কাঁকরুল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, নালিশাক, পুঁইশাক ফলিয়ে লাখ টাকা আয় করেন বলে জানালেন গ্রামের বাসিন্দারা আজির উদ্দিন।
আগে তিনি পাথর উত্তোলন করতেন। সেকথাই বলছিলেন বাংলানিউজকে। তবে তাতে ক্ষান্ত দিয়ে শুরু করেন সবজিচাষ: ‘পরিবেশ ধ্বংস হয় বলে পাথর উত্তোলনের কাজ করা থেকে সরে আসি। এখন হরেক জাতের সবজি চাষ করি। সবজিখেত থেকেই লাখ টাকা আয় হয়। এ দিয়ে সংসার চালাই।
তার কথায় সুর মিলিয়ে একই গ্রামের বাসিন্দা ও সবজিচাষি আফাজ উদ্দিন, জয়নাল আবেদীন, আব্দুস শহিদ, আয়নাল মিয়া বলেন, তাদের গ্রামে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় মুলা ও কাকরুলের। সিলেটের কাঁচাবাজারের বেশিরভাগ মুলা জাফলংয়ের। এছাড়াও জাফলংয়ের বরবটি ও কাকরুল সিলেটের বাজার ধরে রেখেছে।
তবে সবজি চাষে স্বপ্ন বিলাসী গ্রামের মানুষের ভেতরে বিরাজমান উচ্ছেদ-আতঙ্ক। পিয়াইন সংলগ্ন এই গ্রামের মাটির নীচের পাথরের দিকে রয়েছে প্রভাবশালীদের লালসামাখা চোখ। পাথর উত্তোলন করতে যেকোনো সময় উচ্ছেদ করে দেওয়া হতে পারে। অল্পদিনে বিরানভূমি হয়ে যেতে পারে এই সবুজায়ন। গোয়াইনঘাট পূর্বজাফলং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান লেবু বাংলানিউজকে বলেন, শুধু নয়াবস্তি গ্রামই নয়, ইউনিয়নের আসামপাড়া, বাউরবাগ, নয়াগাং, ইসলামপুর গ্রামে সবজিচাষ হয়। ইউনিয়নের জনসংখ্যা লাখের ওপরে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত।
তিনি বলেন, জাফলংয়ের আগের প্রকৃতি আর এখনকার প্রকৃতি ভিন্ন। গত ১৫/১৬ বছরে জাফলং ধ্বংস করে দিয়েছে পাথরখেকোরা। তবে সবুজ ফসলের স্বপ্নবোনা নয়াবস্তি গ্রাম ধ্বংস হতে দেবো না।
তার ইউনিয়নে সবুজায়ন নষ্ট করে পাথর উত্তোলনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বহাল রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৪ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৭
এনইউ/জেএম