শহরের বকুলতলা মোড়ে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে বই আছে প্রায় ৩৫ হাজার। অন্যদিকে শহীদ হারুন সড়কের জামালপুর জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে ডাস্টবিনের গন্ধে কেউ যেতে চান না, খোলা বা বন্ধের সময়ও ঠিক নেই।
পাঠকদের অভিযোগ, গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লাইব্রেরি কমিটির সদস্য সচিব পদ অবৈধভাবে আঁকড়ে রেখেছেন বছরের পর বছর ধরে। এমনকি সেখানে সৌজন্য আসা জামায়াতি দৈনিক সংগ্রাম ও স্থানীয় কিছু পত্রিকা ছাড়া অন্য কোনো পত্রিকাও রাখা হয় না। কমিটির সদস্য কবি সাজ্জাদ আনসারী বাংলানিউজকে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুসারে ১৩ সদস্যের লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি হন জেলা প্রশাসক এবং সদস্য থাকেন পৌরসভার মেয়র। আর নির্বাচিত সদস্যরা মনোনীত করেন সদস্য সচিব। বর্তমান কমিটি ২০ বছর আগে গড়া। কমিটির ৩ জন মারা গেছেন আর ৪ জন বিদেশে চলে গেছেন।
তিনি বলেন, সদস্য সচিব জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট ওয়ারেছ আলী মামুন লাইব্রেরিটিতে দীর্ঘদিন ধরে আসেন না। কমিটি গঠনের পর থেকে একটিও সভা করেননি। দেড় বছর ধরে মেয়র পদেও নেই, অথচ মামুন এখনো কমিটিতেই রয়ে গেছেন এবং বিএনপি-জামায়াতের কর্তৃত্ব হাতছাড়ার ভয়ে নির্বাচন বা নতুন কমিটি করতেও দেন না। আর জেলা প্রশাসক কর্মব্যস্ততায় লাইব্রেরির খোঁজ নিতে পারেন না।
সরেজমিনে গেলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, পিয়ন কাম নাইটগার্ড দুদু মিয়া অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতায় চালাচ্ছেন লাইব্রেরিটি। তিনি পাঠকদের ঢুকতে দেন না ভেতরে, দিলেও বই দেন না। দুদু মিয়ার ভাষ্য, লাইব্রেরিতে বই আছে প্রায় ৩৫ হাজার। কিন্তু এসব বই কেউ পড়েন না।
তবে পাশের মাঠে ক্রিকেট খেলায় রত জামালপুর জেলা স্কুলের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার, কবির, নাইম, সিয়াম ও জিহাদের অভিযোগ, লাইব্রেরিতে ঢুকতে দেওয়া হয় না। ঢোকা গেলেও বই বের করে দেওয়া হয় না। এখানে শুধু কয়েকদিন আগের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকাই পড়তে দেওয়া হয়। নতুন পত্রিকা বলতে রয়েছে জামায়াতের দৈনিক সংগ্রাম।
দুদু মিয়ার দাবি, লাইব্রেরিটি বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে সরেজমিনে গিয়ে বন্ধ পাওয়া গেলেও এর সামনে দেখা গেছে গরুর অবাধ বিচরণ।
বছরের দুই ঈদে জেলা প্রশাসনের দেওয়া মোট ১৫ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন এনজিও’র সভা-সেমিনারের ভাড়াই লাইব্রেরিটির একমাত্র আয়ের উৎস।
সদস্যদের চাঁদা আদায় করা যাচ্ছে না বছরের পর বছর ধরে। কেয়ারটেকার হিসেবে দুদু মিয়া এ ভাড়া আদায় করে হিসাব না দিয়ে অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতায় লাইব্রেরি চালান বলেও অভিযোগ করেন সদস্যরা।
মাসে কতোটি সেমিনার বা সভা হয়- জানতে চাইলে দুদু মিয়া পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘আমরা সরকারি চাকরি করি না। বছরে দুই ঈদে মাত্র ১৫ হাজার টাকা দেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া আমাদের কোনো বেতন নেই। এ টাকা দিয়ে কি সংসার চলে?’
জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাহাবুদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরির কমিটি নিয়ে কোন্দল রয়েছে। নতুন করে কমিটিতে হাত দিলেই সমস্যা। তাই যেমন আছে, তেমনই পড়ে রয়েছে। তবে খুব শিগগিরই কমিটি পুনর্গঠন করে পাবলিক লাইব্রেরিটি সচলের আশ্বাস দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০৩ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৭
এএসআর