এনিয়ে চলছে তাদের চালাচালি!
চলতি বোরো মৌসুমের চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু না হতেই চাল সরবরাহ করার বিষয়ে গড়িমসি শুরু করে দিয়েছেন বগুড়ায় লাইসেন্সধারী মিলাররা। অথচ বিভিন্ন সময় এরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে এসেছেন।

অনেক উপজেলায় চাল দিতে সরকারের সঙ্গে মিলারদের চুক্তিবদ্ধ হতে স্ব স্ব সংগঠনের পক্ষ থেকে মাইকযোগে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অথচ প্রকাশ্যে এ কাজটি করা হলেও গোপনে সংগঠনের নেতারা মিলারদের চুক্তি করতে বারণ করছেন। শুভঙ্করের ফাঁকিটা এখানেই।
এদিকে দফায় দফায় মিটিং করেও চুক্তি করার ব্যাপারে মিলারদের এখনো বাগে আনতে পারেননি খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের ‘চেষ্টা অব্যাহত’ থাকলেও সেখানে আশার আলো অত্যন্ত ক্ষীণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বগুড়া জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং মিল মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার কার্যালয়-সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে এ জেলায় সর্বমোট ৬৮ হাজার ৮শ’ ৮ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে সিদ্ধ চাল ৬২ হাজার ৪শ’ ২৯ মেট্রিক টন ও আতপ চাল ৬ হাজার ৩শ’ ৭৯ মেট্রিক টন। সূত্রটি আরো জানায়, এ জেলায় মোট ১ হাজার ৯শ’ ৩৫জন লাইসেন্সধারী মিলার আছেন। এদের মধ্যে আতপ চালের মিলার ২০১জন। বাকিরা সেদ্ধ চালের মিলার। শনিবারের (২০ মে) মধ্যে বরাদ্দকৃত চাল দিতে সরকারের সঙ্গে এসব মিলারের চুক্তি সম্পন্ন করার নির্দেশনা থাকলেও বুধবার (১৭ মে) পর্যন্ত একজন মিলারও চুক্তিবদ্ধ হননি (অবশ্য জেলা খাদ্য-নিয়ন্ত্রক মো. মাইন উদ্দিনের দাবি এরই মধ্যে ৮জন মিলার চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। )।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকার প্রতি কেজি সেদ্ধ চালের দাম নির্ধারণ করেছে ৩৪ টাকা। আর আতপ চালের ৩৩ টাকা। সেই অনুপাতে ধানের মূল্য বেশি নির্ধারণ করেছে সরকার। সব মিলে বর্তমানে বাজারে চালের মূল্য বেশি। সরকারি মূল্যে চাল দিতে গেলে ব্যবসায়ীরা বলছেন তাদের নাকি লোকসান গুণতে হবে।
এই সম্ভাব্য লোকসান ঠেকাতে মিল মালিকরা একাট্টা হয়েছেন। তারা সরকার-নির্ধারিত মূলে চাল দিতে রাজি না। ফলে সরকারের সঙ্গে এখনো চুক্তিবদ্ধ হননি এসব মিলার। সরকারের কাছ থেকে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পেতে তারা আগ্রহী মিলারদেরও চুক্তিবদ্ধ হতে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি এটিএম আমিনুল হক মিলারদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, জরুরি সভা ডেকে চাল দিতে সব মিলারকে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে বলে দেওয়া হয়েছে। এরপরও কোনো মিলার যদি চুক্তিবদ্ধ না হন তাহলে আমার কিছুই করার নেই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, চালের বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় চুক্তির মেয়াদ মঙ্গলবার (৩০ মে) পর্যন্ত বাড়াতে কেন্দ্রীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে খাদ্যমন্ত্রী ও অধিদফতর বরাবর আবেদন জানিয়েছি। পাশাপাশি প্রতিকেজি চালের বিপরীতে ২ টাকা ইনসেনটিভ সুবিধা চেয়েছি। এখন দেখা যাক কী হয়!
জেলা খাদ্য-নিয়ন্ত্রক মো. মাইন উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, জেলার মিলারদের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করছি। কিন্তু বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় সাড়া মিলছে না। মিটিংয়ে তারা এক কথা বলেছেন আর ভেতরে ভেতরে অন্য কাজ করছেন।
এসব বিষয় উধর্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত জানাচ্ছি। তবে ৮জন মিলার ৩২৯ মেট্রিকটন সেদ্ধ চাল দিতে এ পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি করেন খাদ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম