এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা ওই সমিতির ক্যাশিয়ারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে।
একাধিক গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১২ সালের শেষের দিকে ঈশ্বরদী বাজারের জিন্নাহ মার্কেটে অবস্থিত রুপালী ব্যাংকের ওপরে অফিস ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’।
সমিতি অফিস স্থাপন করার পর থেকে রেলগেট, পূর্ব টেংরী, বাজার, আমবাগান, রেল কলোনি, সুইপার কলোনি, দরিনারিচা, শেরশাহ রোড, লোকোশেড, উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকদের নামমাত্র সঞ্চয়ের বিপরীতে ঋণ দেয়ার প্রস্তাব দেয় প্রতিষ্ঠানটি। প্রতি লাখে দুই থেকে তিন হাজার টাকা মাসিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অংকের আমানত সংগ্রহ করে সংস্থাটি।
ক্যাশিয়ার সুলতানা রাজিয়া শিমুর বান্ধবী শোভা আকতার বাংলানিউজকে বলেন, আমার বান্ধবী শিমু এসে বলার পর কিছুটা সাহস পাই এবং আমানত রাখার সিদ্ধান্ত নেই। পরে সেখানে আমি সাড়ে ৬ লাখ টাকা রাখি। প্রতি মাসে যে মুনাফা আসে সেই টাকাও শিমু আমাকে দেয় নাই। সে ওই টাকাগুলোও ডিপিএস করার কথা বলে রেখে দেয়। সহজ সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়ে এখন সর্বশান্ত হয়ে গেছি।
রেলগেট এলাকার গ্রাহক শম্পা খাতুন অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক মাস ধরে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে কিন্তু কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই তিনদিন আগে আত্মগোপনে চলে যায় সমিতির দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না।
গ্রাহকদের মধ্যে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রাহকরা এসে ক্যাশিয়ার সুলতানা রাজিয়া শিমুর বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।
গ্রাহক শামিমা আকতার পিয়া নামের অপর এক গ্রাহক বলেন, এবারই আমি মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি। চাকরির জন্যে বাবার দোকান বিক্রি করে সাড়ে ৩ লাখ টাকা এখানে রেখেছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক হয়নি।
সমিতিতে কর্মরত স্থানীয় ক্যাশিয়ার সুলতানা রাজিয়া শিমুর সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার স্বামী তৌহিদ আকতার পান্না দাবি করেন, তার স্ত্রী সেখানে চাকরি করতেন। তিনি টাকা আত্মসাৎ করেননি।
তিনি বলেন, প্রায় ছয় শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা আদায় করে প্রতিষ্ঠানটি। আমি নিজেও চেষ্টা করছি গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে।
এ বিষয়ে অপর গ্রাহক শারমিন আকতার জানান, এ ব্যাপারে থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ আমাদের মামলা গ্রহণ করছে না। আমরা গত দুই দিন ধরে থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে ঘুরে এসেছি।
আমবাগান এলাকার গ্রাহক তুহিনা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, জনতা সমিতিতে আমার চার লাখ টাকা এফডিআর ছিল। এ মাসে আমার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। টাকাগুলো অনেক কষ্ট করে জমিয়েছিলাম।
লোকোশেড এলাকার ফার্নিচার ব্যবসায়ী ফজলুল ও প্রসাধনী ব্যবসায়ী লালন দাস জানান, অধিক মুনাফার আশায় পাঁচ লাখ টাকা এফডিআর করেছিলাম। এখন সবই শেষ, ভাই আমাদের জন্যে কিছু একটা করেন।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই বাংলানিউজকে বলেন, আমার কাছে কেউ অভিযোগ দিতে আসে নাই। তবে এ নিয়ে ঝামেলা হলে ক্যাশিয়ার শিমুর বাড়ির সামনে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ব্যাপারে জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মনিরুল ইসলামের মোবাইলে একাধিক বার ফোন করে করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ঈশ্বরদী উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, জনতা সমিতিটি রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনুমতি নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। গত দুইদিন ধরে সমিতিটি অফিস বন্ধ করে চলে গেছে। গ্রাহকরা আমাদের অফিসে এলে আমরাও খোঁজ নিয়ে তাৎক্ষণিক বিষয়টি জেলা অফিসে অবগত করি। গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে আনার জন্যে চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অসহায় গরীব লোকজনের টাকা, আমি যেকোনো উপায়ে এই টাকা ফেরত দেওয়ার পক্ষে। আমি থানা পুলিশকে ইতোমধ্যেই অবগত করেছি। যারা এ সমিতির কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, ঘটনাটি শুনেছি। গ্রহকরা ওই সমিতির ক্যাশিয়ারের বাড়ি এবং উপজেলা সমবায় অফিস ঘেরাও করেছিল। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে পুলিশ গ্রহকদের হয়রানি করছে বিষয়টি সঠিক নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৭
এনটি/আরএ