ঝড়ে স্বজন হারানো মানুষের কান্না যেনো আজও শোনা যায়। বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সে কথা মনে করে আজও আতকে উঠেন।
কলাতলীর চরের বাসিন্দা রমজান আলী বাংলানিউজকে বলেন, সাত ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়। মুহূর্তের মধ্যেই পানিতে ঘর-বাড়ি তলিয়ে যায়। সে ঝড়ের কথা কোনো দিনই ভোলার নয়।
দুর্গম ঢালচরের মৎস্য ব্যবসায়ী মাহাবুব বাংলানিউজকে বলেন, ওই ঝড়ের সময় আমরা কেউ ঝড়ের পূর্বভাস পাইনি। যার ফলে এখানে ক্ষয়-ক্ষতি বেশি হয়েছে। ঝড়টি মুহূর্তের মধ্যেই সব উপড়ে ফেলে দেয়। জেলেদের কয়েকশ' নৌকা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
চর পালিতার সৈকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, বইন্যায় সব তলায়া লইয়া যায়, এমন বইন্যার কথা কি ভুলতে পারি?
এদিকে, আট বছর পেরিয়ে গেলেও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। উপকূলের মানুষের জন্য আজ পর্যন্ত সাইক্লোন সেল্টার ও মাটির কিল্লা নির্মাণ করা হয়নি। এখনও মানুষ পাচ্ছে না ঝড়ের পূর্বাভাস।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছে, সে ঝড়ে ভোলার দুর্গম কলাতলীর চর, ঢালচর, রামদাসপুর, মাঝের চর, হাজিপুর, কুকরি-মুকরি, কচুয়াখালীর চর, চর পাতিলার লক্ষাধিক মানুষ খাদ্য ও পানির অভাবে চার/পাঁচদিন অভুক্ত দিন কাটান। ছড়িয়ে পড়ে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ। জেলা প্রশাসনের অপ্রতুল ত্রাণ তৎপরতা সবার ভাগ্যে জোটেনি তখন।
২০০৯ সালের ২৫ মে এ দিনে ঘূর্ণিঝড় আইলা ভোলার উপকূলে আঘাত হানে। এতে মুহূর্তের মধ্যে ভোলা সদর, মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলায় ৩০ হাজার ঘড়-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। সেখানকার ৪০ গ্রাম লণ্ড-ভণ্ড হয়। জলোচ্ছ্বাস হয় ছয়/সাত ফুট উচ্চতায়। পানিতে ভেসে যায় কয়েকশ’ মাছের ঘের। বিনষ্ট হয় হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। ঝড়ে প্রাণ হারান ১৮ জন। বেড়ি বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ জনপদ ও মানুষের ঘর-বাড়ি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঝড়ের সময় শুরু হয় প্রাণ বাঁচাতে মানুষের দৌড়া-দৌড়ি, ছুটা-ছুটি। ঝড়ে কেউ হারিয়েছেন মা-বাবা, কেউ ভাই-বোন, কেউ বা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে চরম কষ্টে দিন অতিবাহিত করছেন। মানুষের আর্তি যেন থামছে না।
দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র, মাটির কিল্লা ও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার দাবি জানিয়েছেন উপকূলের মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
আরবি/এসএইচ