তাকে নিয়েই যাত্রা শুরু গোমস্তাপুরের দিকে। নাচোল থেকে ১৫ কিলোমিটারের মত পথ পশ্চিমে।
বাজারের দুই অংশের ত্রিভূজের মত ব্রিজ পেরিয়ে ওপারে যাওয়া হলো। চিপা অলি-গলি পেরিয়ে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই চোখের সামনে চলে এলো ‘বেগম মহল’। কিন্তু একি অবস্থা! দেখেই মনটা বিষাদে ভরে গেল।
মহলের সীমানা প্রাচীর কবেই খেয়ে নিয়েছে দখলদারেরা। মূল ভবনের ছাদ ধসে উচ্চতা কমে এসেছে অর্ধেক। তারওপর টিন দিয়েই চলছে ভোগদখল।

সামনের দুইপাশে বাজারের ব্যবসায়ীরা যে যার মতন মালামাল রেখেছেন। উত্তর পাশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি জিয়াউর রহমান দখল করে বানিয়েছেন কার্যালয়। আর পুরো ভবনটা দখল করে নিয়ে ভাড়া দিয়েছেন ভোগদখলকারীরা।
বাড়ির পশ্চিম পাশে অর্থাৎ উঠোনটাও দখল করে নিয়েছে অনেকে। কয়েকটি পরিবার সেখানে টুপরির মত ঘর তুলে থাকছেন ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে। এই টুপরি ঘরগুলোর ঠিক সামনেই রয়েছে একসময়ের খরস্রোতা পুনর্ভবা নদী।
পঞ্চাষোর্ধ্ব অটোচালক তোজাম্মেল হক বললেন, এই যে চারপাশে যা জমি দেখছেন, সবই ছিল বেগম সাহেবের। যার বেশিভাগই দখল হয়ে গেছে।

অনেককে জিজ্ঞেস করেও জানা গেল না, বেগম সাহেবের পুরো নাম কি? মিথ আছে তিনি ছিলেন কুমারী জমিদার। উত্তরাধিকার সূত্রে তিন ভাই-বোনের মধ্যে বেগম সাহেবই চালাতেন জমিদারি। কিন্তু ১৯৭১ সালের বেশ কয়েক বছর পর তারা সবাই ভারতে চলে যান।
স্থানীয়রা বলছেন, তারা চলে যাওয়ার পর, বেগম মহল ভোগ দখলে নেন তৎকালীন সংসদ সদস্য খালেদ আলী মিয়া। তিনিই মহলের সামনের অংশে কয়েকটি পরিবার থাকারও অনুমতি দেন। কিন্তু মহলটি রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ কখনোই নেননি।
প্রায় ধ্বংসের শেষপ্রান্তে মহলটি এখন বাজারের ব্যবসায়ীরাই ভাড়া নিয়ে মালামাল রেখেছেন। আর এই ভাড়ার টাকা আদায় করে খালেদ আলী মিয়ার ছেলে আরাফাত মিয়া।
ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘চার-পাঁচটা কক্ষের মধ্যে আমি একটা কক্ষ ভাড়া নিয়ে মালামাল রেখেছি। এটা ভোগ দখল করছে খালেদ আলী মিয়ার পরিবারই। তার ছেলে আরাফাত মিয়া মাসে মাসে ভাড়া তোলেন।
মহলের সামনের অংশে ঘর তুলে রয়েছে রিজিয়া বেগমসহ আরো কয়েক জনের পরিবার। বাংলানিউজকে তারা বলেন, স্বাধীনতার পরপর এখানে আমাদের জায়গা দিয়েছেন খালেদ এমপি। এরপর থেকে এখানে আছি। আগে নদী আরো পশ্চিমে ছিল। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এতো কাছে চলে এসেছে।
এলাকাবাসী বলছেন, সুরোম্য মহলটি এক সময় খুব দর্শনীয় ছিলো। সামনে বাঁধানো ঘাট ছিলো পুর্নভবা নদী পর্যন্ত। সেখান থেকেই চলতো বেগম সাহের বজরাও। এক সময় অনেকে মহলটি দেখতেও আসতেন। তবে এখন এটি কেবল ধ্বংসাবশেষ। সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ মহল রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে-এমনটিও কখনো চোখে পড়েনি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
ইইউডি/জেডএম