একই দশা আশুলিয়া থানার অন্য ৯টি আঞ্চলিক সড়কেরও। ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে সড়কগুলোর বেহালদশায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসী, বিভিন্ন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের।
তবে বছরের পর বছর ধরে সংস্কার ও মেরামত কাজ চললেও শেষ করতে পারছে না স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। সর্বশেষ চলমান প্রকল্পের মেয়াদ শেষের ৪ থেকে ১৬ মাস পরও ওই ১০টি আঞ্চলিক সড়কের সংস্কার কাজ অর্ধেকও হয়নি।
নগর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩টি প্যাকেজের অধীনে ২৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে এসব আঞ্চলিক সড়কের সংস্কার কাজ চলছে।
এর মধ্যে ৮ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জিরানি-শিমুলিয়া (৮ কিলোমিটার) ও ৮১ লাখ টাকায় কবিরপুর-বাইদগাও আঞ্চলিক সড়কের (২.৮৫৫ কিলোমিটার) কাজ ৪০ শতাংশও সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের জুন মাসে সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল প্রকল্প দু’টির কাজ।
অন্য ৮টি আঞ্চলিক সড়ক সংস্কার ও নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় আরও ১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ বছরের জুন মাসে প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা থাকলেও এখন ঠিকাদারেরই দেখা মিলছে না! সড়কগুলো হলো- কুটুরিয়া-বগাবাড়ি সোনিয়া মার্কেট ( ৪.৫৭ কিমি),, জামগড়া-চিত্রশাইল কাঠগড়া বাজার (৩.৬১৫ কিমি),, শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ড-কাশিমপুর (১.৫ কিমি), জামগড়া চৌরাস্তা- ভাদাইল (২.৪৮৭ কিমি), ভাদাইল চৌরাস্তা- মাদারটেক আনবিক শক্তি কমিশন দ্বিতীয় গেট (১.২৮ কিমি), বার্ডস কারখানার ফটক-গাজীরচট আলিয়া মাদ্রাসা ( ১.২৭০ কিমি), কুমকুমারি-সাধুপাড়া (২.৩০ কিমি) এবং ধলপুর-কাঠগড়া (১.৫২৫ কিমি)।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সড়কগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কয়েকশ’ শিল্প-কারখানা, রয়েছে একাধিক করে স্কুল-কলেজ ও হাসপাতালও। প্রতিদিন শত শত ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করছে সড়কগুলোতে। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত খানা-খন্দ ও পানি জমে থাকায় যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সড়কগুলোতে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন হাসপাতালের রোগীরা। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জুতা হাতে নিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে। এমনকি সড়কগুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে চলাচলেরও সুযোগ নেই।
তীব্র যানজটসহ সড়কগুলোর এমন বেহালদশায় শিল্পবান্ধব এলাকাটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। আবার কিছু গড়ে তুললেও কারখানার মালামাল আনা-নেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের।
বেচা-কেনা না থাকায় সড়কগুলোর পাশের অসংখ্য দোকান-পাটও বন্ধ রাখতে বাধ্য হওয়ার অভিযোগ তুলছেন ব্যবসায়ীরা।
এলাকাবাসীকে নিজেদের উদ্যোগে ইট-বালি ফেলে রাস্তা ঠিক রাখার নিস্ফল চেষ্টা করতেও দেখা গেছে।
স্থানীয় প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ বছরে ৩/৪ জন ঠিকাদার আশুলিয়ার জিরানি-শিমুলিয়া বাজার সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করলেও শেষ না করেই পালিয়ে গেছেন। ফলে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য হয়ে ফের টেন্ডারের মাধ্যমে নতুন ঠিকাদারের হাতে কাজ তুলে দিতে হচ্ছে।
এর মধ্যে প্রায় ১০ বছর আগে টেন্ডারের মাধ্যমে ৭ কোটি সাড়ে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দে সড়কটি মেরামতের দায়িত্ব দেওয়া হয় এক ঠিকাদারকে। তবে কাজ শুরু না করেই পালিয়ে যান ওই ঠিকাদার।
পরে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আরও এক কোটি টাকা বাড়িয়ে ৮ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় বর্তমান ঠিকাদারকে। প্রকল্পটির কাজ গত বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি।
স্কুলগামী কয়েকজন শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলে, বেহাল এ সড়কে হাঁটতে গিয়ে জামা-প্যান্ট ও জুতা ময়লা হয়ে যায়। প্রায় সময়ই স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়। এমনকি মাঝে মধ্যে স্কুলে না গিয়ে ফিরেও আসতে হয়।
যানবাহনের চালক মানব দে জানান, একটি নতুন গাড়ি এ সড়কে নামানো হলে ছয়মাস পরেই মেরামতের জন্য নিতে হয়। প্রায়ই সময় গর্তে আটকে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। প্রতিদিন যা আয় হয়, তা ব্যয় হয়ে যায়।
সাভার উপজেলা প্রকৌশলী ধীরেন্দ্র দেবনাথ জানান, আশুলিয়ার আঞ্চলিক সড়কগুলোতে কাজ চলছে। এর আগে কিছু জটিলতার কারণে কাজের ধীরগতি ছিল। তবে খুব দ্রুতই সড়কগুলোর সংস্কার শেষ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৭
এএসআর