ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

শিক্ষকদের টাকা মেরে স্কুলের জমি বেচে দিলেন সভাপতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৭
শিক্ষকদের টাকা মেরে স্কুলের জমি বেচে দিলেন সভাপতি এই সেই স্কুল। ছবি: বাংলানিউজ

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ভূইগড় গিরিধারা আবাসিক এলাকায় প্রতারণার অভিনব ঘটনা ঘটেছে। গিরিধারা রমজান আলী চিশতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৪ লক্ষাধিক টাকা আত্মসা‍ৎ করে স্কুলটির জমি বিক্রি করে দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে।

সভাপতির অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ইতিমধ্যে ওই স্কুলটির ভবন বেদখল হয়ে গেছে। ফলে শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ১২০ জন শিক্ষার্থীর।

এ বিষয়ে স্কুলটির পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে একাধিক অভিযোগ দেয়া হলেও কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
 
অভিযোগে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের ২৯ আগস্ট ফতুল্লার ভূইগড় গিরিধারা আবাসিক এলাকায় রমজান আলী চিশতী উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে সাড়ে ৭ শতাংশ জমি দান করে দলিল (নং ৪২৪০) সম্পাদন করেন ওই এলাকার বাসিন্দা সেলিম চৌধুরী। তিনি স্কুলের নামে জমি লিখে দেয়ায় এলাকাবাসীর সহায়তায় ওই বছরের ডিসেম্বরে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। যাতে সেলিম চৌধুরীকে সভাপতি ও হাজী শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোনীত করে ১১ সদস্যের পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। পরিচালনা কমিটি স্কুলটি শিশু থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ১৪ জন শিক্ষক ও শিক্ষিকা নিয়োগ দেয়া হয়। স্কুলটি এমপিওভুক্ত না করা পর্যন্ত পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন করার সিদ্ধান্ত হয়। এইভাবেই ২০১৫ সাল পর্যন্ত স্কুলটি পরিচালিত হয়।

এর মধ্যে এমপিওভুক্ত করে দেয়ার নামে শিক্ষকদের প্রতি জনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে সবর্মোট ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেলিম চৌধুরী। এরপর তিনি স্কুলের জমি একই এলাকার আনিছুর রহমান মৃধা, দাদন আকন, আব্দুল আলিম ও আতাউর রহমানের কাছে বিক্রি করে দেন।

বিষয়টি জানতে পেরে গত ১৮ মে স্কুলটির শিক্ষকদের পক্ষে শিক্ষিকা সালেহা বেগম দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার, জেলা শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এছাড়া স্কুলটির সম্পত্তি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ আদালতে তিনটি মামলাও বিচারাধীন রয়েছে।

স্কুলের দেয়ালে নতুন ক্রেতাদের নাম।  ছবি: বাংলানিউজএরই মধ্যে গত ১৬ অক্টোবর দখলদাররা স্কুলটির অবকাঠামো দখল করে নিয়ে টেবিল বেঞ্চসহ সকল আসবাবপত্র লুটে নেয় এবং স্কুলটির সাইনবোর্ড মুছে ফেলে সেখানে তাদের নামের সাইনবোর্ড সাটিয়ে দেয়। পরদিন ১৭ অক্টোবর স্কুলটির পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি হাজী শাহাদাৎ চৌধুরী পুলিশ সুপারের কাছে গিরিধারা রমজান আলী চিশতি উচ্চ বিদ্যালয়টি রক্ষার আবেদন জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানান, স্কুলটির জমি যারা দখলে নিয়েছেন তারা এলাকার প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে যুক্ত। তাদের নেপথ্যে স্থানীয় অনেক প্রভাবশালী ক্ষমতাসীন দলের নেতা রয়েছেন। যে কারণে কেউ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে স্কুলটির সভাপতি সেলিম চৌধুরীর মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

স্কুলের জমি দখলে নেয়া আনিছুর রহমান মৃধা জানান, স্কুলটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেলিম চৌধুরী শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রেজ্যুলেশন এনেছেন, তিনি স্কুলটি আর পরিচালনা করবেন না। এছাড়া স্কুলটিতে কোন শিক্ষার্থীও ছিলো না। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি রোগে আক্রান্ত। যে কারণে তিনি স্কুলের জমি আমাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। আর কোন শিক্ষক যদি তার কাছে অর্থ পেয়ে থাকেন তাহলে তারা তার বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগ করবেন।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামালউদ্দিন জানান, এ বিষয়ে তার জানা নেই। তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।

জেলা শিক্ষা অফিসার শরীফুল ইসলাম জানান, কেউ যদি স্কুলের নামে সম্পত্তি দান করে তাহলে সেটা জনগণের সম্পত্তি হয়ে যায়। সেই জায়গা পুনরায় বিক্রি করার এখতিয়ার তার নেই। গিরিধারা রমজান আলী চিশতি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।    

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।