ঢাকা, রবিবার, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বরগুনায় পিআইও-প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৭
বরগুনায় পিআইও-প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছবি-বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কম

বরগুনা: বরগুনা সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও উপসহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে টিআর ও কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা সংস্কারের নামে ২৫টি প্রকল্পে বরাদ্দের ৭ লাখ ২৪ হাজার ৮৫০ টাকা এবং কর্মসৃজন কর্মসূচির ৮৮ লাখ ৩২ হাজার টাকার কাজ না করে তা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে ওই দুই কর্মকর্তা বিরুদ্ধে।

বরগুনা ত্রাণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নে সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা সংস্কারের নামে (এক টন গমের দাম ২৮ হাজার ৯৯৪.৮২) ২৫টি প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

যে সব টাকা ২৮ জুন বরগুনা সদর উপজেলা প্রকল্প অফিস থেকে নিজ নিজ প্রকল্পের সভাপতি চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করেছেন।

বরাদ্দকৃত স্থান সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কোনো প্রকল্পেই কাজ হয়নি। এমনকি যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বা সম্পাদকসহ সদস্যরা কেউই জানেন না এসব প্রকল্পের ব্যাপারে।

এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের 'মনসাতলী মিলন কাপালী সার্বজনীন মন্দিরের মাঠ ভরাটের নামে একটি প্রকল্পের ২৮ হাজার ৯৯৪.৮২ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু ওই মন্দিরের সামনে কোনো মাঠই নেই।

মন্দিরের সভাপতি মিলন কাপালী বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাড়ির মন্দিরের নামে টাকা বরাদ্দ হয়েছে তা আমার জানা নেই। অথচ ওই মন্দিরের মাঠ ভরাট প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে বরগুনা পিআইও অফিসে টাকা উত্তোলনে নাম দেখা গেছে, এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. নাসির উদ্দিনের।

একই ইউনিয়নের লাকুরতলা লতিফ মেম্বার বাড়ির জামে মসজিদ সংলগ্ন মাঠ ভরাটের নামে একটি প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল লতিফ মেম্বার বলেন, মসজিদের মাঠ ভরাট অথবা সংস্কারের নামে কোনো টাকার খবরই পাইনি।

এছাড়া ১০টি ইউনিয়নে এ বছর কর্মসৃজন কর্মসূচির ২৩টি প্রকল্পের ৯৮ লাখ ২২ হাজার ৫৬ টাকা ২৮ জুনের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার কথা। কিন্তু ওই দুই অসাধু কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ের পর ২৪ আগস্ট বরগুনা সোনালী ব্যাংক থেকে ওই টাকা তুলে নেয়। কর্মসৃজন প্রকল্পটি ২৬ জুন শেষ হলেও ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে আগস্ট মাসে।

১০টি ইউনিয়নে কর্মসৃজন কর্মসূচির কাজ শুরু হয় মে মাসের এক তারিখ। শেষ হওয়ার কথা ৩০ জুন। একজন শ্রমিক সপ্তাহের শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ৫ দিন কাজ করবেন। বৃহস্পতিবার তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে এক হাজার টাকা তুলে নেবেন। এ ক্ষেত্রে ওই দুই কর্মকর্তা নির্ধারিত সময় শ্রমিকদের টাকা না দিয়ে ২৮ জুনের পর টাকা ২৪ আগস্ট বরগুনা সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দেয়।

বরগুনা সদর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) জিএম ওয়ালিউল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, একাধিক প্রকল্প থাকায় একার পক্ষে সব প্রকল্পের খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কর্মসৃজন কর্মসূচির টাকা শ্রমিকদের মজুরি যথা সময়ে কেন দেয়া হয়নি, এ প্রশ্নের কোনো জবাব তিনি দিতে পারেননি।

উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ূন কবির বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। সব কিছু পিআইও জানেন।

ওই ২৫টি প্রকল্প ছাড়াও বরগুনার বিভিন্ন ইউনিয়নে আরও একাধিক নামে মাত্র প্রকল্প তৈরি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সংশ্নিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, ২৪ অক্টোবর, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।