কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবা প্রকল্প এবং বাংলাদেশ পপুলেশন অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোগ্রামের বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে চক্রটি শতশত মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়, আবেদনের পর মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে ইন্টারভিউতে ডাকা হতো।
আরো জানা যায়, ইন্টারভিউর কয়েকদিন পরেই আবেদনকারীদের জন্য ট্রেনিংয়ের আয়োজন করতে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউথ অর্গানাইজেশন’ নামে প্রতিষ্ঠানটি। ট্রেনিং বাবদ নির্দিষ্ট অংকের ফি নেওয়ার পর নিয়োগপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে সটকে পড়ে প্রতারক চক্রের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর উত্তরার ৯ সেক্টরের ৭/বি নম্বর রোডের ৪/বি ভবনে থাকা একটি অফিস থেকে শাহীন আলম (৪৫), মো. হেমায়েত খান হায়দার (৪০), জামাল উদ্দিন (৩৫) নামের প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
প্রতারক চক্রটি আর্ন্তজাতিক যুব সংস্থা, কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবা প্রকল্প এবং বাংলাদেশ পপুলেশন অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোগ্রামে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে শতশত মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলো।
পুলিশ জানায়, প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে তিন প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা মানুষকে চাকরি দেওয়ার নামে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে।
ডিএমপি’র উত্তরা বিভাগের উত্তরা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) তাপস চন্দ্র বাংলানিউজকে বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার নামে শতশত মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলো চক্রের সদস্যরা।
আবেদনকারীদের ইন্টারভিউতে ডেকে প্রত্যেকের কাছে টাকা দাবি করে। ভুক্তভোগীদের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারণার অভিযোগে উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের একটি অফিস থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তাপস চন্দ্র আরো জানান, প্রতারক চক্রের এ অফিসের আগের নাম ছিল ‘শ্যামল ছায়া’। পরে নাম পরিবর্তন করে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউথ অর্গানাইজেশন’ রাখে।
প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী জাহানারা আক্তার (১৭) বাংলানিউজকে বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজের কর্তদক্ষতা যাচাই করতে চাকরির সন্ধান করি। এ কারণে ‘বিডি জবস’ এর মাধ্যমে গত ১৬ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল ইউথ অর্গানাইজেশনে আবেদন করি। আবেদনের ৪ দিন পর ২০ অক্টোবর ইন্টারভিউ’র জন্য আমাকে বাছাই করে বলে একটি এসএমএস আসে মোবাইলে। ওইদিন দুপুরে সেখান থেকে কলও করে আমাকে।
‘২৪ অক্টোবর সকাল ৯টার দিকে ইন্টারন্যাশনাল ইউথ অর্গানাইজেশনের উত্তরার অফিসে ইন্টারভিউ দিতে যাই। তারা হাতে একটি প্রবেশপত্র ধরিয়ে দেয় এবং ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে বলে। পরে আমাকে দেড় হাজার টাকা দিতে বলা হয়। টাকা না থাকায় আমি ৫শ’ টাকা জমা দেই।
সকাল ১০টার দিকে আমার মৌখিক পরীক্ষা নেয়। প্রথমে নাম-ঠিকানা এবং পরে দু’টি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা। প্রশ্ন দু’টি হলো- বর্তমান স্বাস্থ্যমস্ত্রীর নাম কি? ও কোন কোন খাদ্যে ভিটামিন ‘সি’ আছে?
একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও আমাকে বাংলাদেশ পপুলেশন অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোগ্রামের লালবাগ জোনের সুপারভাইজারের পদে নিয়োগ নিশ্চিত করে তারা। বাকি টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দিয়ে ২৭ অক্টোবর থেকে সাতদিনের একটি ট্রেনিংয়ের কথা বলা হয়।
পুরো বিষয়টি প্রতারণা মনে হলে আমি পুলিশকে অবহিত করি–যোগ করেন প্রতারণার শিকার জাহানারা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৭
এসজেএ/জেডএস