ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘সিল মেরে’ সিঙ্গাপুরের বদলে শ্রীঘরে শাহীন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৭
‘সিল মেরে’  সিঙ্গাপুরের বদলে শ্রীঘরে শাহীন! ধরা পড়ার পর শাহীন হোসেন, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: থাইল্যান্ড যেতে কোনো বাহন লাগে না বরিশালের শাহীন হোসেনের (৩০)! এমনকি কল্পনায় গেলেও তার পাসপোর্টে বসে যায় থাই এমনকি সিঙ্গাপুর ভ্রমণে ইমিগ্রেশন বিভাগের আগমনী ও বর্হিগমন সিল!

এমনই ‘অদ্ভুত যাত্রী’ নিয়েই তোলপাড় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগ।

থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর ভ্রমণ না করেও ভুয়া ভিসা এমনকি ইমিগ্রেশন সিল দিয়ে নিজের পাসপোর্টের প্রোফাইল ‘ভারী’ করেছিলেন শাহীন।

কিন্তু বিধিবাম।

তৃতীয়বারের চেষ্টা। এবারও ভুয়া ভিসা। তবে সত্যি সত্যি সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পথে ধরা পড়লেন তিনি। সিল মারা পাসপোর্ট, ছবি: বাংলানিউজ

ভ্রাম্যমাণ আদালতের মুখোমুখি হয়ে সিঙ্গাপুরের পরিবর্তে সোজা শ্রীঘরে যেতে হলো তাকে।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আদালত দোষী সাব্যস্ত করে ছয় মাসের জেল দিয়ে পাঠিয়েছেন কারাগারে।

শাহীন হোসেন বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার বড়কাটা গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। তার পাসপোর্ট নম্বর বিপি-০২৯৪৭০২। ঘটনা বুধবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলের। বাংলাদেশি বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজের সিঙ্গাপুরগামী ফ্লাইট (আরএক্স ০৭৮৪) ধরার জন্য শাহীন যান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। কনকোর্স হলেই সন্দেহভাজন যাত্রীদের নজরদারী করছিলেন ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিদর্শক খলিল হোসেন, উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিন আহমেদ ও এএইচএম জাহিদুল ইসলাম। এক পর্যায়ে শাহীনের পাসপোর্ট পরীক্ষা করেই চোখ কপালে ওঠে ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তাদের।

ভুয়া থাইল্যান্ড আর সিঙ্গাপুরের ভিসায় প্রথমে সন্দেহ হয় তাদের। যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের সূচনায় সহজ স্বীকারোক্তিতে শাহীন জানান, তিনি কখনও থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুরে যাননি।

তাহলে থাইল্যান্ডের ভিসায় ‘ইউজড’ সিলের পাশাপাশি ইমিগ্রেশন সিল দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় ইমিগ্রেশন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের।

পাসপোর্টে থাকা সিলে দেখা যায় ওই যাত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডে গিয়ে যথারীতি বাংলাদেশে ফিরেছেন ২২ অক্টোবর। কীভাবে? বিষয়টি দ্রুত যাচাই করতে কর্মকর্তারা বিমানবন্দরের ডকুমেন্ট এনালাইসিস সেন্টারে (ডিএসি) যাচাই করতে গিয়ে দেখতে পান পাসপোর্টে থাকা ভিসা ও ইমিগ্রেশন সিল সবকিছুই ভুয়া!

পরে জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন জানান, তার লক্ষ্য ছিল উন্নত দেশে পাড়ি দেওয়ার। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই দালালদের মাধ্যমে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে নিজের পাসপোর্ট ভারী করেছেন।

যোগাযোগ করা হলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওসি ইমিগ্রেশন; সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মুকিত হাসান খান বাংলানিউজকে বলেন, ওই যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, দিলকুশা মতিঝিল এলাকার আরএস ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় একটি অফিসে এমন জাল ভিসা ও ইমিগ্রেশন চক্র রয়েছে। সেখানকার দালাল মফিজুল ইসলাম শিশির (মোবাইল নম্বর-০১৭৬-৬২০৩৬৬) ও আলমের (মোবাইল নম্বর-০১৮৪৯-৭৫০৮৬৯) মাধ্যমেই দুই লাখ টাকার বিনিময়ে নিজের পাসপোর্টে সে ভুয়া ভিসা ও ইমিগ্রেশন সিল বসিয়েছে।

এভাবে ভুয়া ভিসা বা সিল বসিয়েই কী লাভ?
‘‘ইমিগ্রেশন বিভাগ বা বিভিন্ন দূতাবাসকে বিভ্রান্ত করা। কারণ প্রাথমিকভাবে এটা দেখানো যে সে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছে। এভাবে ইমিগ্রেশন বিভাগকে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা অন এরাইভাল দেয় এমন দেশে পাড়ি দেওয়া। সেখান থেকে আবার অবৈধ উপায়ে উন্নত দেশে পাড়ি জমানোই থাকে এ ধরনের যাত্রীদের মূল উদ্দেশ্য’’, বলেন মুকিত হাসান খান।

একটি সংঘবদ্ধ চক্র এভাবে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে তাদের এভাবে উন্নত দেশে পাঠানোর চেষ্টা করছে বলেও জানান এই অভিবাসন কর্মকর্তা।

তার মতে, বিমানবন্দরের ইমিগ্রশন বিভাগ এখন আগের চাইতে অনেক বেশি সর্তক। জাল-জালিয়াতি করেও লাভ নেই। ধরা পড়তেই হবে। শেষ পর্যন্ত শাহীনের মতো সিঙ্গাপুরের পরিবর্তে যেতে হবে শ্রীঘরে। এভাবেই সতর্কতার বাণী মুকিত হাসান খানের।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৭
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।