মঙ্গলবার (অক্টোবর ৩১) ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে ৪টা। কুড়িল কুড়াতলী বাজার সংলগ্ন টিনশেড বাড়ির সামনে বাঁশের গাদায় শিকলে বাঁধা একটি বানর।
এলাকার প্রাণী রক্ষাকারী এক সদস্যের কাজ থেকে খবর পেয়ে বানরটিকে উদ্ধার করতে অভিযানে যান বনবিভাগের কর্মকর্তারা।
খবর পেয়ে মালিক কিছুক্ষণ লাপাত্তা থাকেন। এদিকে আস্তে আস্তে বানর উদ্ধার কার্যক্রমকে ঘিরে শুরু হয় এলাকাবাসীর ভীড়। এলাকাবাসী বুঝিয়ে-শুনে নিয়ে আসে বানরের মালিক বৃষ্টিকে। বনবিভাগ বানর নিয়ে যাবে শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃষ্টি। জানান, গুলিস্তান থেকে খুব ছোট থাকতে বানরটি তিনি নিয়ে আসেন। সন্তানের মতো মানুষ করেছেন তাকে। বানরটি নিয়ে গেলে বেঁচে থাকা তার জন্য কষ্টকর হবে।
প্রতিবেশীরা তার এমন বক্তব্যকে সমর্থন করে। তাকে একদিন সময় দেওয়ার আহ্বান জানায়। এমনকি বানরটি না নিয়ে যাওয়ার জন্য শোরগোল করতে থাকে।
বনবিভাগের বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক এলাকাবাসীকে বন্যপ্রাণি পোষা অপরাধ বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এর ফলে কি কি শাস্তি হতে পারে তাও জানান।
বানর উদ্ধারে বদ্ধপরিকর বনবিভাগের কর্মকর্তারা শিকল খুলে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে বানরটিকে ভরতে চেষ্টা করেন। অনেক চেষ্টার পর বানরটি ভরতে পারলেও একটু পরেই ঢাকনা খুলে পালিয়ে যায়। এ সময় উপস্থিত জনতা উল্লাস করে ওঠে। মালিককে দিয়ে আবারও বানরটি নিয়ে এসে ঝুড়িতে ভরানো হয়। এবার শক্ত করে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঝুঁড়ির মুখ আটকানো হয়।
ঝুঁড়ি গাড়িতে নিয়ে আসার সময় পেছন পেছন এলাকাবাসী চিৎকার শুরু করে। উদ্ধার কর্মকর্তাদের ইট-পাথর ছুঁড়ে মারে। এরইমধ্যে ঝুঁড়ির ভেতর উদভ্রান্ত বানর বের হয়ে দেয় ভোঁ-দৌড়। পরে আধা ঘন্টা বানরটি ধরার চেষ্টা করলেও আর পাওয়া যায়নি। পরে প্রায় দুই ঘণ্টার অভিযান বুধবারের জন্য স্থগিত রেখে বনবিভাগ ক্ষান্ত হন।
অসীম মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, আমার চাকরি জীবনে বন্যপ্রাণি উদ্ধার করতে এসে এতো মানুষ দেখিনি। বেশি লোকজনের কারণে বানরটি বিভ্রান্ত হয়েছে। কালকে পুরো ইউনিট নিয়ে এসে বানরটি নিয়ে যাওয়া হবে। গাজীপুরের সাফারি পার্কে বানরটিকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, মানুষ বন্যপ্রাণির পোষা, খেলা দেখানো-এ বিষয়ে আগের থেকে সচেতন হয়েছে। তবে বন্যপ্রাণি শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে, খাওয়া-দাওয়া দিয়ে তারা মনে করে যত্ন হচ্ছে। বন্যপ্রাণি পোষার কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। এ বিষয়গুলো তারা জানে না।
বনবিভাগ বন্যপ্রাণি রক্ষায় অনেক সচেষ্ট, বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে বন্যপ্রাণি উদ্ধার করে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর ২৯-খ ধারা অনুসারে, লাইন্সেস ব্যতীত বন্যপ্রাণি আটকে রাখা, আয়ত্ত্বে রাখা, পালা, অবৈধভাবে পরিবহন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রথমবার ৬ মাসের জেল অনাদায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, পরবর্তীতে এক বছরের জেল অনাদায়ে ১ লাখ টাকা, অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৭
এমসি/আরআর