এছাড়া আজিজা প্রেমিক মো. রোমান হোসেন (২০) ও তার দুই বন্ধুর কাছে লাঞ্ছিত হয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মেয়েটির মোবাইল ফোন কল ট্র্যাক করে সোমবার (৩০ নভেম্বর) ও মঙ্গলবার (৩১ নভেম্বর) নরসিংদীর পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে আজিজার প্রেমিকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রায়পুরার উপজেলার চর মরজাল গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে নরসিংদী পৌর এলাকার ব্রাহ্মণপাড়া মহল্লার কাজলের বাড়ির ভাড়াটিয়া মো. রোমান হোসেন (২০), তার বন্ধু সদর উপজেলার কামারগাঁও এলাকার আলম মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া (২১) ও সদর উপজেলার নাগরিয়াকান্দি এলাকার মনু মোল্লার বাড়ির ভাড়াটিয়া জহু মিয়ার ছেলে মো. রেজাউল করিম।
গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘটনার দিন দুপুরে কিশোরী আজিজা তার প্রেমিক রোমানের সঙ্গে দেখা করার জন্য পরিবারের লোকজনকে কিছু না বলে নরসিংদী শহরে যায়। এরপর পরিবারের লোকজন জোরপূর্বক আজিজার বিয়ে ঠিক করেছেন বলে রোমানকে জানায় এবং রোমানের কাছে তিন মাসের জন্য একটি ঘর ভাড়া করার দাবি জানায় । এসময় রোমান আজিজার কাছে ঘর ভাড়ার টাকা চাইলে আজিজজার কাছে তিনটি মোবাইল সেট, কিছু গহনা ও পাঁচ হাজার টাকা আছে বলে সে রোমানকে জানায়। পরে রোমান তার বন্ধু সুজন, রেজাউল করিম ও সজীবকে খবর দিলে তারা এসে আজিজার কাছে থাকা টাকা, গহনা ও মোবাইল আত্মসাতের পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনামতে রোমান কিছুক্ষণের জন্য নরসিংদী শহরে তার এক নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে একটি কক্ষ ভাড়া করে। এরপর সেখানে রোমান আজিজাকে শ্লীলতাহানির করে। এসময় রোমানের সহযোগী সুজন তা মোবাইলে ধারণ করে। পরে আজিজাকে ওই ভিডিও দেখিয়ে গহনা, টাকা ও মোবাইল নেওয়ার চেষ্টা করে। আজিজা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রোমানের বন্ধু সুজন আজিজার ভাইয়ের কাছে মোবাইলে তার বোনকে একটি ছেলের সঙ্গে আটক করা হয়েছে বলে জানায় এবং তাকে ছাড়াতে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। অন্যথায় ইন্টারনেটে ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
এতে আজিজার ভাই সুজন মুক্তিপণ দিতে অস্বীকৃতি জানালেও আজিজার খালা তারাবানু ফোন করে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিতে রাজি হয়। এতে রাজি হয়ে ওই প্রেমিক চক্র আজিজার সঙ্গে থাকা মোবাইল, গহনা ও টাকা রেখে দেয় এবং ধারণ করা ওই ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। পরে আজিজা একাই রাতে বাড়ি ফেরার সময় মিজান নামে একজনের দোকান থেকে এক লিটার কেরোসিন তেল কেনে বলে পুলিশ তদন্তে জানা যায়। এরপর রাত ৯টায় স্থানীয়রা আজিজাকে বাড়ির পাশের ঝোঁপঝাড় থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া পথে সে মারা যায়।
এ ঘটনায় আজিজার চাচী বিউটি বেগমসহ চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা তিন জনকে আসামি করে শিবপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা আব্দুস সাত্তার। এরপর পুলিশ নরসিংদীর পৃথকস্থানে অভিযান চালিয়ে রোমান ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিলেও এটি আসলেও হত্যা না আত্মহত্যা সে বিষয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৭
এনটি