ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

কুয়াশায় ভিজে যায় শরীরে জড়ানো ব্যানার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১৭
কুয়াশায় ভিজে যায় শরীরে জড়ানো ব্যানার রুবেল- বুলবুল ফুটপাতে ঘুমিয়ে আছে, ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: জন্মের পরই মা ও পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারায় রুবেল (৫)। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর পথে-ঘাটেই কাটে তার দিন-রাত।

এরপর দুই বছর বয়সে ভিক্ষাবৃত্তি করে চললেও বর্তমানে রুবেল শহরের বিভিন্ন ডাস্টবিন থেকে পরিত্যক্ত বোতল সংগ্রহ করে। পরে তা মহাজনের কাছে বিক্রি করে দিন চলে তার।

বুধবার (১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজারের ফুটপাতে রুবেলের সঙ্গে কথা হলে এমনটাই জানান সে।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় চারপাশ অন্ধকার হয়ে রাত ভারী হওয়ার আগেই পথ-ঘাটের মানুষেরা যখন ঘরমুখি। শহর হচ্ছে জনশূন্য। ঠিক ওই সময় দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজারের ফুটপাতে দুই পথশিশু একটি পরিত্যক্ত ব্যানার বিছিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। শীত আসি আসি করছে। তাই তো আকাশ থেকে ঝরে পড়া কুয়াশায় ভিজে গেছে তাদের শরীরের জাড়ানো ব্যানার।

এছাড়া মাটির নিচের ঠাণ্ডা বিছানা ব্যানার ছেদ করে লাগছে শরীরে। উপর-নিচের ঠাণ্ডার মধ্যে শীতে কাতর হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে আছে। ঠাণ্ডায় কাঁপছে তবুও ঘুমের চেষ্টায় মগ্ন তারা। রুবেল- বুলবুল ফুটপাতে ঘুমিয়ে আছে, ছবি: বাংলানিউজএদেরই একজন রুবেল। তার সঙ্গে কথা হলে রুবেল বাংলানিউজকে জানায়, সারাদিন পরিত্যক্ত বোতল কুড়িয়ে সন্ধ্যায় মহাজনদের কাছে বিক্রি করে। যা দিয়ে কোনো মতে তিনবেলার হালকা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়। জন্মের পর বাবা-মাকে হারিয়ে যখন আমি এতিম। তখন আমি আত্মীয় স্বজনদের বোঝা হই। ঠাঁই হয় শহরের পথ-ঘাটে। ওই এলাকায় বাবা-মা বসবাস করতেন তাই স্থানীয়রা আমাকে চিনে। স্থানীয়রা অনেকেই আর্থিক ও খাদ্য দিয়ে আমাকে সাহায্য করেন।

রুবেল জানায়, শহরের বিভিন্ন পথ-ঘাটের ডাস্টবিন থেকে মাল কুড়িনোর সময় বুলবুল (৬) নামে অপর পথশিশুর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। এখন দুই বন্ধু একইসঙ্গে মাল কুড়া, খাওয়া ও ঘুমায়। রাতে ফুটপাতে দুই বন্ধু ঘুম দেই। গরমকালে ঘুমের কোনো অসুবিধা হয়না। বর্ষা ও শীতে ঘুমাতে চরম কষ্ট হয়। এক সময় এমনও দিন কেটেছে নির্ঘুম রাত দাঁড়িয়ে বসে থেকে। বর্তমানে শীতের হওয়া বইছে চারিপাশে। ফুটপাতে ঘুমালে প্রচণ্ড শীত লাগে। কিন্তু কি করবো? ঠাণ্ডা লাগলেও ঘুমাতে হয়ে এখানে।

অপরদিকে রুবেলের বন্ধু বুলবুল ছোট থেকেই স্টেশনে থাকেন। জন্মের পর থেকেই বাবা-মাকে দেখেনি। বাবা-মা না থাকায় অনেকেই তাকে মারধর করতো। এখন দুই বন্ধু একসঙ্গে থাকি খাই। কষ্ট আর কষ্ট দিতে পারেনা আমাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৭
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।