জানা গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থায় অধিকতর উন্নয়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক রুট বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহর রংপুরের দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্যই তিস্তা নদীর উপর ‘কাকিনা-মহিপুর’ ঘাটে দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর নির্মাণ করছে সরকার।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর ও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের মহিপুর এলাকায় তিস্তা নদীর উপর দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণ করা হয়।
২০১২ সালের ১২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালেক্টরেট মাঠে জনসভায় সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৪ সালের ৩১ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় কাঁচামাল পরিবহনের অভাবে কাজে গতি কমে যায়। ফলে কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে এ বছর কাজ শেষ করে সেতুটি বুঝে দিতে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশন। সেতুটির দ্বার খুলে গেলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বুড়িমারী স্থলবন্দরের সড়ক পথের দূরত্ব কমে যাবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার। কমে আসবে সময় ও জ্বালানি খরচ। লালমনিরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) জানায়, ১২১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থ্যের দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুতে ১৬টি পিলার, ২টি অ্যাপার্টমেন্ট, ১৭টি স্প্যানে ৮৫টি গার্ডারের উপর সেতুটি নির্মিত। সেতুটির দু’পাশের সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজও শেষ প্রান্তে। সেতুটির উত্তর পাশে তিস্তার বাম তীরে ১ হাজার ৩০০ মিটার দীর্ঘ নদী শাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পাকাকরণের কাজও শেষ হয়েছে।
অপরদিকে ডান তীরে মহিপুর অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরনো নদী শাসনের সিসি ব্লক রয়েছে।
এদিকে সেতুটির নামকরণ কবি শেখ ফজলল করিম সেতু করার দাবি তুলেছেন স্থানীয় কবি ভক্ত পরিবার। সেতুটির উত্তর প্রান্তে কাকিনা গ্রামে চিরশায়িত কবি শেখ ফজলল করিমের নামে সেতুটির নাম করণের দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে কবি ভক্ত পরিবার ও স্থানীয়রা।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু যাতায়াতের জন্য খুলে দেয়া হলে গাড়ি ভাড়া যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি দ্রুত নিত্যপণ্য গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।
তাছাড়া বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যও দ্বিগুণ বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্দরের গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করছেন তারা। এছাড়া বিভাগীয় শহর রংপুরে সঙ্গে লালমনিরহাটের আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতিবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের পথ কমে আসবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার।
কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনার কলেজছাত্র এমএ কাহার বকুল বলেন, সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হলে রংপুরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। লালমনিরহাটের ৪টি উপজেলার শিক্ষার্থীরা বাড়িতে থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ রংপুরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার সুযোগ পাবে।
হাতিবান্ধার নুরন্নবী বলেন, অসুস্থ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত ৫০ কিলোমিটার পথ ঘুরে রংপুরে নিতে হতো। সেতুটি খুলে দেয়া হলে সময় ও জ্বালানি ভাড়া দু’টোই কমে আসবে। মূলত সেতুটির দ্বার খুলে গেলে রংপুর ও লালমনিরহাট দু’জেলার উন্নয়নের দুয়ার খুলে যাবে।
সেতু বাস্তবায়নকারী লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ বাংলানিউজকে জানান, মূল সেতুর কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। সংযোগ সড়কের মহিপুর অংশের সামান্য কাজ বাকী রয়েছে। যা চলতি মাসেই শেষ হবে। ডিসেম্বরে সেতুটি উদ্বোধন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
আরবি/আরএ