যাত্রী রাজি না হলে একধাপে ১০০ টাকা কমে ৩০০ টাকায় নেমে আসে। ভাড়া শুনে রেদোয়ান বলেন, ‘উবার’ কল করলে এখনি আসতেছে, তোমার আর যাইতে হইবো না’।
পরে দর কষাকষিতে ২৫০ টাকায় যেতে রাজি হন চালক। অটোরিকশার দরজা খুলতে খুলতে বলে ওঠেন, ‘ওবার-পাঠাও আমাগো ভাত মারছে!’ যাত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বুঝলেন মামা, কামাই নাই, খ্যাপ কইম্যা গেছে। বউ-বাচ্চা নিয়া ঢাকায় আর থাকতে হইবে না’।
কুড়িল বিশ্বরোড থেকে যাত্রাবাড়ি মোড় পর্যন্ত সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভাড়া এতোদিন ২৫০ টাকা অবিশ্বাস্যই ছিল। তবে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুরের দৃশ্যটিই বলে দিচ্ছে, রাজধানীতে অ্যাপস্ভিত্তিক পরিবহন সেবা চালু হওয়ায় এমন ভাড়ায় পাওয়া যাচ্ছে বাহনটি।
ঢাকায় প্রথম অ্যাপস্ভিত্তিক পরিবহন সেবা চালু করে শেয়ার এ মোটরসাইকেল (স্যাম)। এরপর উবার, পাঠাও, চলো, আমার বাইক, আমার রাইড, ময়ুর, ওয়েজসহ বিভিন্ন অ্যাপস্ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের সেবা নিয়ে হাজির হয়।
সিএনজি চালিত অটোরিকশার কয়েকজন চালক বলেন, ‘উবারের পর পাঠাও চালু হওয়ায় যাত্রী একবারেই কমে গেছে। সারাদিনে দুই-একটা ট্রিপ পাওয়া যায়। তাও আগের মতো ভাড়া দেন না যাত্রীরা। ঢাকা শহরে পরিবার নিয়ে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে অটোরিকশা চালানো ছেড়ে দিতে হবে’।
অটোরিকশা চালক লোকমান বলেন, ‘প্রথমে উবার আমাদের যাত্রী টানলো। এরপর এলো পাঠাও। এখন দুই-তিনজন যাত্রী একসঙ্গে না হলে কেউ সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ওঠেন না। আবার অপরিচিত যাত্রীর সঙ্গে শেয়ারও করতে চান না। আমরা চরম দুর্দিনে পড়েছি’।
‘সরকার তো নতুন নতুন গাড়ি নামাচ্ছে, আমাদের মতো গরিবদের কথা কেউ ভাবছেন না। জিনিসপাতির দাম বেড়ে গেছে, সারাদিনে মালিককে দিয়ে ২০০-৩০০ টাকা থাকছে। ১০০ টাকা কম দিলে মালিক জঘন্য খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করেন, যা উচ্চারণ করা যায় না’।
তবে পাঠাও-উবারের প্রভাবে সিএনজি কম ভাড়ায় অটোরিকশা পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন যাত্রীরা।
যাত্রী আলী আহমেদ বলেন, ‘যানজটের এই নগরীতে অটোরিকশা চালকদের হাতে জিম্মি ছিলাম আমরা। ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করতেন তারা। আগে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে কুড়িল বিশ্বরোড যেতে ২৫০-৩০০ টাকা নিতেন। এখন ১৫০ টাকায়ও যান। রিকশা চালকদের মতোই ডেকে ডেকে যাত্রী নিচ্ছেন তারা’।
‘কয়েকদিন আগে আমি মিরপুর-১০ থেকে পাঠাওয়ের বাইকে এয়ারপোর্টে গেলাম ১৩০ টাকায়। সেখানে অটোরিকশায় লাগতো ৩০০ টাকা। যেভাবে অ্যপস্ভিত্তিক পরিবহন সেবা জনপ্রিয় হচ্ছে, সিএনজি চালিত অটোরিকশার আরও ভাড়া না কমালে দুর্দিনে পড়তে হবে তাদেরকে’।
অটোরিকশা চালক বেলাল হোসেন বলেন, ‘বেশি ভাড়া নেই বলে আমাদের দোষ দেন যাত্রীরা। কিন্তু মালিকরা জমার টাকার জন্য চাপ দেন, তা নিয়ে কেউ বলেন না। বাজারে জিনিসপাতির দাম বেড়েছে। আমাদের অবস্থা শ্যাষ। আজকে (মঙ্গলবার) আট ঘণ্টায় দুইটা খ্যাপ পাইছি। খ্যাপ কম হওয়ায় মালিকের টাকা দিয়ে আমাদের কিচ্ছু থাকে না। এরপর ট্রাফিক পুলিশকেও টাকা দিতে হয়। অনেকেই গাড়ি চালানো বন্ধ করে গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন’।
ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন দুলাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত অটোরিকশার জমা দিনে ৯০০ টাকা। কিন্তু অনেক মালিক ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত জমা নেন। তিন শিফটে গাড়ি চালালে প্রতি শিফটেই জমা নেন ৭০০ টাকা। অ্যাপস্ভিত্তিক পরিবহন সেবা নামায় বহুমুখী সমস্যায় পড়েছেন চালকরা’।
‘আমরা চাই, অ্যাপস্ভিত্তিক পরিবহনগুলোর নীতিমালা হোক। উবার, পাঠাও- এগুলোর কোনো রুট পারমিট নেই। আমরা অ্যাপসের বিরুদ্ধে নই। ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে সিএনজি অটোরিকশাও অ্যাপসে চালাতে হবে। এ সমস্যার সমাধান না হলে অনেক লোক বেকার হবেন। মালিকদেরকেও চালকদের অবস্থা বুঝতে হবে। জমার টাকার জন্য চাপ দিলে চলবে না’।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
এমসি/এএসআর