ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কাস্টমস-পুলিশ দ্বন্দ্ব: ইমিগ্রেশন ওসি প্রত্যাহার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭
কাস্টমস-পুলিশ দ্বন্দ্ব: ইমিগ্রেশন ওসি প্রত্যাহার বেনাপোল কাস্টমসের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে লাইনেই মধ্যাহ্নভোজ। ছবি: বাংলানিউজ

বেনাপোল (যশোর): বেনাপোল ইমিগ্রেশনে ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে কাস্টমস-পুলিশ হাতাহাতি ও ভবন ভাঙচুরের ঘটনায় ইমিগ্রেশনের ওসি ওমর শরীফকে বদলি করা হয়েছে। তবে কাস্টমসের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ঘটনা তদন্তে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ জাকির হোসেনের নেতৃত্বে ৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট কাস্টমস-ইমিগ্রেশনের মূল ফটক এখন পর্যন্ত সিলগালা অবস্থায় রয়েছে।

এ পথে যাতায়াতকারী কাস্টমস-ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও যাত্রীরা বিকল্প পকেট গেট ও প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল দিয়ে যাতায়াত করছেন। এতে চাপা ক্ষোভ আরো বেড়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ ও শৃঙ্খলা ফেরাতে নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

বেনাপোল কাস্টমসের সামনে যাত্রীদের অলস সময়।  ছবি: বাংলানিউজসোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে বেনাপোল ইমিগ্রেশন থেকে খুলনা ডিআইজি অফিসে বদলি করা হয়েছে ওসি ওমর শরীফকে। তবে এখন পর্যন্ত তার স্থানে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ওই দিন ইমিগ্রেশন পুলিশের সাথে হাতাহাতিতে লিপ্ত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রাশেদসহ ৪ জনকে ঘটনার পর থেকে চেকপোস্ট কাস্টমসে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি।

এদিকে কাস্টমসে বেড়েছে নজরদারি। সকালে কাস্টমস-ইমিগ্রেশন ভবনে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে একজন কাস্টমস সিপাহি সাধারণত যাত্রীর পাসপোর্ট পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেন সেখানে একজন সহকারী কমিশনারসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়োজিত রাখা হয়েছে।

তবে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনে জনবল কম থাকায় কাজের ধীর গতিতে যাত্রী লাইন ইমিগ্রেশন এলাকা ছাড়িয়ে পাশ্ববর্তী গ্রাম সাদিপুরের ব্রিজ পার হয়ে গেছে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কাউকে কাউকে লাইনে বসে দুপুরে খাবার খেতেও দেখা গেছে।

ভারতগামী যাত্রী অনামিকা বাংলানিউজকে বলেন, সকাল ৭টা থেকে ৪ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ইমিগেশনের কাজ শেষ করতে পারিনি। যে অবস্থা তাতে ওপারে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তাই দুপুরের খাবার লাইনে বসে খেয়ে নিচ্ছি।

ভারত ফেরত যাত্রী শাহিন জানান, আগে ঘুষ নিয়ে দ্রুত কাজ করতো। এখন তারা ঘুষ খাচ্ছে না, তাই হেলে দুলে কাজ করছে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) বলেন, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইমিগ্রেশন ভবন পরিদর্শন করেছেন। যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে তারা আন্তরিক ভাবে কাজ করছেন।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, চেকপোস্ট কাস্টমস-ইমিগ্রেশন ভবনে ট্রাক্স ফাঁকিসহ বিভিন্ন অনিয়ম রোধে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রীদের কাস্টমস ও সোনালী ব্যাঙ্কের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে স্থানান্তর করা হবে। এসময় প্রয়োজনীয় শাখাগুলোতে যাত্রী সেবা বাড়াতে জনবল বৃদ্ধির বিষয়েও সংশিষ্ট দপ্তরকে চিঠি ইসু করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এর আগে বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রী শাখাওয়াত হোসেন গত ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভারত থেকে ফিরে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পথে কাস্টমসে আটকা পড়েন। কাস্টমস সদস্যরা কেনা-কাটার জন্য তার কাছে ঘুষ দাবি করেন। শাখাওয়াত হোসেন পরে বিষয়টি ইমিগ্রেশন ওসিকে জানান। ওসি তখন কাস্টমস এর রাজস্ব কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে ওই কর্মকর্তা শাখাওয়াতকে লাঞ্ছিত করেন ও ওসিকে অপমান করেন। ইমিগ্রেশনের অন্য পুলিশ সদস্যরা প্রতিবাদ করলে কাস্টমস ও পুলিশের মধ্যে হাতাহাতি, ভবন ভাঙচুরসহ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী যাত্রী কাস্টমসের বিরুদ্ধ ঘুষ বাণিজ্যের
অভিযোগ এনে বেনাপোল পোর্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। আর পুলিশের বিরুদ্ধে পাচার কার্যক্রমের অভিযোগ এনে বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন কাস্টমস সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা,  ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭
এজেডএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।