ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

হাড়ে কামড় বসানো শীতে কাহিল মানুষ

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৮
হাড়ে কামড় বসানো শীতে কাহিল মানুষ শীতে কাহিল উত্তরের মানুষ/ছবি: কাওসার উল্লাহ আরিফ

বগুড়া: অনেকটা গর্তে চলে গেছে চোখ দুটো। চোখের নিচের কালো রেখা স্পষ্ট। মুখমন্ডলের পুরো অবয়ব ছেয়ে গেছে ভাজে। মাথার চুলগুলো পেকে ধারণ করেছে সাদাবর্ণ। পরনের কাপড়ের ওপর গায়ে জড়িয়ে নিয়েছেন সেলাই করা পুরোনো পাতলা কম্বল। জড়োসড়ো হয়ে বসে শুধু বের করে রেখেছেন মুখটা। তবু শীতে থরথর করে কাঁপছিলেন জোবেদা বেওয়া।

তখন বিকেল গড়িয়ে সবেমাত্র সন্ধ্যা। ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে দুপুর থেকে শহর এলাকায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান।

কিন্তু শীতের কাপন সইতে না পেরে রাত নামার আগেই ঘরে ফেরেন এই বৃদ্ধা।
 
স্থানটা বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্ম। চারপাশটা ফাঁকা। মেঝে ঢালাই করা। অনেক স্থানে ঢালাইকৃত মেঝের ওপর থেকে পলেস্তার উঠে গেছে। সেখানেই চট বিছিয়ে রাত কাটান এই বৃদ্ধা।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে অভাবী ছিন্নমূল মানুষজন জীবিকার সন্ধানে বগুড়া শহর এলাকা বসতি গড়ে তুলেছেন অনেক আগ থেকেই। এরমধ্যে শহরের রেলওয়ে স্টেশন, হাড্ডিপট্টি, রেললাইন, বাদুরতলা, চেলোপাড়া, নারুলী অন্যতম। এসব এলাকায় লোকজন ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করেন।
 
এদের মধ্যে শিশু, কিশোর-কিশোরীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের ভাঙাড়ি, পলিথিন, কাগড় কুড়িয়ে বেড়ায়। অনেকেই রিকশা চালান। হোটেল-রেস্তোরাঁয় শ্রমিকের কাজ করেন। আবার অনেক নারী বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। বয়স্ক নারী-পুরুষ অন্যের দ্বারে দ্বারে চেয়েচিন্তে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। শীতে কাহিল উত্তরের মানুষ/ছবি: কাওসার উল্লাহ আরিফসরেজমিনে দেখা যায়, শীতের মরণ কামড় থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে তাপাচ্ছেন। যাদের পরনে শোভা পাচ্ছিলো হালকা কাপড়-চোপড়। অর্থাৎ যার যা আছে তাই দিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছিলেন। অপরদিকে মধ্য ও উচ্চ বিত্ত পরিবারের লোকজন শীতের পোশাক পরেও শীতের কামড় সামলে উঠতে পারছিলেন না। বাঁচ্চাকে শীতের কাপড়ে জড়িয়ে শহরের সাতমাথায় রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন এক মা। পাশেই পরপর দু’টো রিকশায় চড়ে জড়োসড়ো হয়ে গন্তব্যে ছুটছিলেন দু’টো পরিবারের সদস্যরা। শীতে কাহিল উত্তরের মানুষ/ছবি: কাওসার উল্লাহ আরিফজোবেদা বেওয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাবা আমি গরীব মানুষ। স্বামী অনেক আগেই মারা গেছে। ছেলে-মেয়ে থেকেও নেই। বিয়ে করে যে যার মত সংসার করে। আর তারাও অভাবী। ওদেরই বা কি দোষ দিবো। তাই মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে চেয়েচিন্তে খাবার যোগাড় করতে হয় আমাকে। খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। এরমধ্যে শীতের কাপড় কেনার টাকা কোথায় পাবো’।
 
রিকশা চালক বাদশা মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘দিনের বেলায় রিকশা চালাতে পারি না। সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত রিকশা চালাই। কিন্তু শীতে কুলাতে পারি না। তাই কোন দিন রাত ১২টা আবার কোন দিন রাত ২টা পর্যন্ত কষ্ট করে রিকশা চালায়। এরপর যা কামাই হয় তাই নিয়ে রিকশা গ্যারেজে রেখে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি চলে যাই’।

বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বাংলানিউজকে জানান, রোববার (০৭) ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৮
এমবিএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।