ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

হেফাজতে মৃত্যু আইন নিয়ে ‘কষ্টে’ পুলিশ 

প্রশান্ত মিত্র, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
হেফাজতে মৃত্যু আইন নিয়ে ‘কষ্টে’ পুলিশ 

ঢাকা: আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে কোনো ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রণীত ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে’ অসঙ্গতি রয়েছে উল্লেখ করে এর সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। 

আইনে পুলিশি হেফাজতে কোনো ব্যক্তির ‘মানসিক কষ্টে’র কথা উল্লেখ থাকলেও এর সুনির্দিষ্ট না থাকায় উল্টো পুলিশ সদস্যরাই কষ্টে আছেন বলে জানিয়েছেন তারা।  
 
পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয়দিন মঙ্গলবার (০৯ জানুয়ারি) রাতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একথা বলেন।

সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
 
সূত্র বলছে, নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা অমর্যাদাকর আচরণ কিংবা শাস্তির বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সনদের কার্যকারিতা প্রদানের লক্ষ্যে প্রণীত ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন- ২০১৩’ এ ২ এর ৬ নং ধারায় মানসিক কষ্টকে নির্যাতন হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
 
সভায় পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, নির্যাতনে ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মানসিক কষ্টের একটা বিষয় আছে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে মানসিক কষ্টের কোসো সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব না। আমরা যখন একটা লোকের বিরুদ্ধে মামলা দিই তখন সে মানসিক কষ্টে থাকে।  

‘আমরা যখন তাকে ধরে নিয়ে যাই কিংবা তাকে যখন জেলখানায় পাঠানো হয়, তখনও সে মানসিক কষ্টে থাকে। তার মানসিক কষ্ট কিন্তু শেষ হয় না। এই আইনে মানসিক কষ্ট সংযোজন করার ফলে আমরা নিজেরাই এখন কষ্টে আছি। ’
 
তিনি বলেন, সাধারণত পুলিশের তদন্তের সবচেয়ে বড় শক্তি উপ-পরিদর্শকরা (এসআই)। এই আইনের কারণে তারা মামলার তদন্ত করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
 
পুলিশের বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধেও এই আইনে মামলা হয়েছে উল্লেখ করে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি বলেন, একজন ওসি থানার দায়িত্বে থাকেন। যখনই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়ে যায়, তখন তাকেও জেলখানায় যেতে হয়। কিন্তু আইনে জামিনের বিধান নেই। আমরা এই আইনটাকে বাতিল করতে চাই না, সংশোধন চাই। জামিনযোগ্য বিধান রেখে বিভিন্ন অসঙ্গতিগুলোর সংশোধন চাই।
 
সভায় ডিআইজি মাহবুবুর রহমানও তার বক্তব্যে নির্যাতন এবং পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনের সংশোধন দাবি করেন। এছাড়া সন্ত্রাস বিরোধী আইনেও কিছু অসঙ্গতির কথা তুলে ধরেন কর্মকর্তারা।
 
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যাচাই-বাছাই করে আইনের অসঙ্গতিগুলো সংশোধন করা হবে।  
 
সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশ ক্যাডারে পদের বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি যখন এসপি ছিলাম, তখন যারা টিএনও ছিলেন তারা এখন সচিব। অথচ আমি চাকরির শেষ পর্যায়ে এসেও সে পর্যন্ত যেতে পারিনি।
 
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক বলেন, প্রত্যেকটা ক্যাডার সার্ভিসের পদে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটা সেলও গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক ক্যডারেই পদ-পদবী সমন্বয় করতে আমরা কাজ করছি।
 
অতিরিক্ত ডিআইজি (ট্রেনিং) খন্দকার মুহিত উদ্দিন বলেন, জনপ্রশাসনে প্রশিক্ষণ নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতার কথা বলা আছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শাখায় কর্মরতরা নিয়মিত সেই ভাতা পেয়ে থাকেন। কিন্তু একাধিকবার উত্থাপন স্বত্ত্বেও পুলিশের প্রশিক্ষণ শাখায় কর্মরতরা কোনো ভাতা পান না। ফলে এই শাখায় কাজ করতে মেধাবীরা অনাগ্রহ প্রকাশ করে।
 
সভা সূত্র জানায়, সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নিজেদের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় মন্ত্রীদের কাছে বিভিন্ন দাবি এবং প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
 
সার্বিক বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, এবারই প্রথম বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সামনে সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের কথা তুলে ধরেছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা এ বিষয়ে পজেটিভ রেসপন্স করেছেন, যার ফলে তা বাস্তবায়ন সহজ হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
পিএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।