ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘ভোট এলে সবার আগে বস্তিবাসী, জিতলে খোঁজ নাই’

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৮
‘ভোট এলে সবার আগে বস্তিবাসী, জিতলে খোঁজ নাই’ বস্তিবাসীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন আতিকুল/ছবি: শাকিল

ঢাকা: শাহজাদপুর ঝিলপাড় বস্তি। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) এখানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচনের গণসংযোগ করতে এসেছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। গুলশান লেক পাড়ের বসবাসকারী বস্তিবাসীর সঙ্গে কোলাকোলি করছেন। শুনছেন তাদের সমস্যা, দিচ্ছেন সমাধানের নানা প্রতিশ্রুতি।

সম্ভাব্য এই প্রার্থীকে পেয়ে বস্তিবাসীও জমানো ক্ষোভ ও সমস্যার কথা জানালেন। এর মধ্যে নিজের তিনশ ফুট কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে আয়েশা নামে এক নারী বলে উঠলেন, ‘নির্বাচনের আগে যত আমগো খোঁজ, জিতলে আর খোঁজ নাই।

একদিনের জন্যও সমস্যার কথা শুনতে আসবে না। ’   
 
রাজধানীতে বইছে ঢাকা উত্তর সিটির উপ-নির্বাচনের হাওয়া। এরই মধ্যে ২৬ ফেব্রুযারি ভোট গ্রহণের দিন ঠিক করে উপ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রার্থী হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরতে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও ভোটারদের সঙ্গে গণসংযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। নগরবাসীও নতুন করে নগরপিতা নির্বাচনের হিসাব কষতে শুরু করেছেন। নির্বাচনের এ হাওয়া লেগেছে বস্তিগুলোতেও। প্রার্থী হওয়ার আগে ভোট চাওয়া শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আতিকুল ইসলাম।

সংসদ, সিটি করপোরেশনসহ প্রতিটি নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা বস্তিবাসীদের জন্য উন্নয়নের নানান ফিরিস্তি নিয়ে আসে। নির্বাচন শেষ হলে সেই বিজয়ী প্রার্থী উন্নয়ন তো দূরের কথা, বস্তি উচ্ছেদে নেমে পড়েন, অভিযোগ আয়েশাসহ রাজধানীর শতশত বস্তিবাসীর।

নির্বাচনী গণসংযোগে আমিকুল/ছবি: শাকিলশাহজাদপুর লেকপাড়ের বস্তিতে বসবাসকারী করা আলেক বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে এখানে আছি। কোনো দিন একটা সাহায্য আসতে দেখলাম না, কোনো মেয়রের পক্ষে। নির্বাচন আসছে বলে উনি (আতিকুল ইসলাম) এসেছেন। ছোট ছোট ঘরে থাকি, ভালো টয়লেট নেই, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ সমস্যাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। দেখার কেউ নেই।

ভোট এলে উন্নয়নের কথা বলে, আমরাও প্রতিবার নিজের ভাগ্যের উন্নয়নের হবে এ আশাতে ভোট দিতে যাই বলেন আলেক।

ঘিঞ্জি পরিবেশ, নোংরা ও স্যাঁতস্যাঁতে বস্তিতে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছে নগরীর পরিবহন শ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, গৃহকর্মীসহ নিম্নআয়ের মানুষজন। ঝিলপাড়ের এই বস্তির জমি কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানির বলে জানা যায়। দুইশ থেকে তিনশ ফুটের এক একটি কক্ষ চড়া ভাড়া দিয়ে থাকতে হয় তাদের। এর মধ্যে যে কোনো সময় উচ্ছেদের ভয়। উচ্ছেদ হলেও হয়না পুনর্বাসন। তবে প্রতিটি নির্বাচনের আগে পেয়েছে নানা প্রতিশ্রুতি।

আজিজার রহমান নামে এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, ভোটের হাওয়া তো কেবল শুরু। আজকে উনি এসেছেন, এরপর থেকে কতজনেই আসবেন। থাকার ঘর, কাজ দিবেন; এমন কত আশাই দিবেন, সব ভোটের আগে। ভোট শ্যাষ, খবর শ্যাষ।

গণসংযোগকালে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বস্তিবাসীর উদ্দেশে বলেন, আপনারা পাশে থাকবেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ঢাকাকে সুন্দর করবো। বাসযোগ্য গড়ে হিসেবে গড়ে তুলবো।  

কত আঘাত আর উচ্ছেদে ঘর হারা হয়েছে নিম্ন আয়ের এ বস্তিবাসীরা। রাজধানীর কোনো প্রান্তে নতুন করে আবারও  গেড়েছে বাসস্থান। কখনও সরকার বা সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন পরিকল্পনায় স্থান পায়নি বস্তিবাসীরা। এরপরও ডিএনসিসি উপ নির্বাচনকে ঘিরে হয়ত আশায় বুক বাঁধবেন নিম্ন আয়ের এসব মানুষ।

**পাহাড় সমান সমস্যা এলেও সমাধান করবো
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৮
এমসি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।