ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে ১০ ভারতীয়

রহমান মাসুদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১১

ঢাকা: অবশেষে অভিযুক্ত ১০ ভারতীয় নাগরিককে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ইসি এ সিদ্ধান্ত নেয়।



মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার একটি গ্রামে ভারতীয় জঙ্গি সংগঠন ‘উলফা’ সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত এ ১০ জনের নাম ছবিসহ ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।

একই সঙ্গে তাদেরকে তাদেরকে তালিকাভুক্ত করায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

গত সোমবার মাঠ পর্যায়ের তদন্ত শেষে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয়।

কমিশন সূত্র জানায়, পুলিশি তদন্তে ভারতীয় নাগরিকের বাংলাদেশের ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার বিষয়টি প্রথম ধরা পড়ে। এরপর নির্বাচন কমিশনের অনুসন্ধানেও তাদের ভুয়া পরিচয় প্রমাণিত হয়।
 
শুক্রবার ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব (নির্বাচন) মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুলিশি প্রতিবেদন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, অভিযোগকারী ও সাক্ষীদের বক্তব্য গ্রহণের মাধ্যমে অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মতামতের ভিত্তিতে ওই ১০ জনকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ’
 
তবে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্টদের হাতে থাকায় তা বাতিলের পাশাপাশি পরবর্তী করণীয়ও ভেবে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
 
ইসির তদন্তে অভিযুক্তরা উলফা সদস্য প্রমাণিত না হলেও তাদের অনাবাসী অস্ত্রধারী গ্রুপের সদস্য বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
 
এর আগে গতবছর ১২ অক্টোবরে জুড়ি উপজেলার পূর্বজুড়ি ইউনিয়নের ছোট ধামাই গ্রামের ভোটার তালিকায় ১০ জন উলফা সদস্য রয়েছে বলে পুলিশ ও জেলা নির্বাচন অফিসে অভিযোগ করেন বড় ধামাই ইউনিয়নের বাসিন্দা আলহাজ আদর উদ্দিন।
 
ওই আবেদনে চাওথোই সিংহ (ভোটার নম্বর ০৩৯০), নানাও দেবী (ভোটার নম্বর ০২৫০), রোমি সিংহ (ভোটার নম্বর ০৩৬৩), ববিতা দেবী (ভোটার নম্বর ০২৭৩), মানান শর্মা (ভোটার নম্বর ০১১৯), বেনু সিংহ (ভোটার নম্বর ০১৯৪), উলেন সিংহ (ভোটার নম্বর ০০৬৬), শৈলেজা (ভোটার নম্বর ০০৭১), জাইকায়া সিংহ (ভোটার নম্বর ০০৮০) ও ধনী সিংহকে (ভোটার নম্বর ০৪২) উলফা সদস্য উলে¬খ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
 
জেলা বিশেষ শাখা বিষয়টি তদন্ত করে ওই বছরের ২০ অক্টোবর পুলিশ সুপার মো. হারুন-অর-রশীদ গোপনীয় প্রতিবেদনে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে জানায়, ‘তদন্তে ভুয়া ভোটার হিসেবে ভারতীয় নাগরিকের নাম অর্ন্তভূক্তির সত্যতা পাওয়া যায়। ’
 
পরে ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াছিন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে একপত্রে গোপনীয় প্রতিবেদনে উলি¬খিত ভারতীয় জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।
 
মৌলভীবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন গত ৮ নভেম্বরে এ বিষয়ে ইসির কাছে নির্দেশনা চান।

ওই কর্মকর্তা অভিযুক্ত ১০ জনের মধ্যে ৪ জনের নাম ভোটার তালিকা ও সিডিতে ভোটার নম্বরে গড়মিল পান।
 
২৪ নভেম্বর জেলা নির্বাচন ও রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তাকে অভিযোগের বিষয়ে যাচাই করার নির্দেশ দেয় ইসি।
 
এরই ধারাবাহিকতায় তদন্ত শেষে ১৮ এপ্রিল ভোটার রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা বেলায়েত এক চিঠিতে ইসিকে জানায়, অভিযুক্ত ১০ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা নন।

এ পত্রের ভিত্তিতে সংশি¬ষ্ট বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইসির উপ-সচিব (নির্বাচন) কমিশন সভায় জানান, অভিযুক্ত ১০ জনকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল করতে হবে।
 
ভুয়া ভোটার তৈরিতে কারা জড়িত, তদন্ত করবে কমিশন
 
ইসির কাছে রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা বেলায়েত জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের জন্মসনদ থাকায়, রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে ভোটার হওয়ায় এবং ভোটার তালিকা তৈরির সময় অভিযুক্তরা এলাকায় ছিল বলেই তারা তালিকাভুক্ত হয়েছে। ফলে তারা বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রও পায়। তদন্তকালে সংশি¬ষ্টদের অভিযুক্ত ১০ ভোটারের বিষয়ে মুখ খুলতে ভীত সন্ত্রস্ত ভাব দেখে প্রমাণ হয়, অভিযুক্তরা অনাবাসী অস্ত্রধারী গ্রুপের সদস্য।
 
পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের ওই সময়ের চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন, সদস্য নীলবাবু সিংহ, সংশি¬ষ্ট তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার নিশ্চিত করেন ওই ১০ জন এ এলাকার নন।
 
এ কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত দু’জনের শনাক্তকারী ও যাচাইকারী হচ্ছেন ইউপি সদস্য নীলবাবু। আর ৫ জনের শনাক্তকারী ও যাচাইকারী রনজিতা শর্মা, রাজকিশর সিংহ, রাজমোহন সিংহ, চন্দ্রহাস সিংহ ও শীতল তদন্তে অনুপস্থিত ছিলেন।

বাকি তিনজনের যাচাইকারীর নাম অস্পষ্ট থাকায় পচিরয় জানা সম্ভব হয়নি।
 
ইসির উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, ‘ভুয়াদের যারা ভোটার তালিকাভুক্ত হতে সহায়তা করছে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবে ইসি। এক্ষেত্রে কারা জড়িত ছিল সে বিষয়টি যাচাই করতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।