কৈশোরের লালিত স্বপ্ন দিনভর সংসার-সন্তান সামলাতে গিয়ে একদিন নিঃশেষ হয়ে যায় এসব নারীর। এরপর হয়তো কারো সময় কাটে দীর্ঘশ্বাসে।
ঘর সামলানো নারীরা আটকে পড়েন গৃহিণী পরিচয়ে। দিনরাত স্বামী-সন্তানের দেখভাল, তাদের নিয়েই শত ব্যস্ততায় দিন কাটে তার। নিত্যদিনের ব্যস্ততায় ভালোবাসায় গড়া সংসারে এক ঘেয়েমি কাজে হাঁপিয়ে ওঠার সুযোগ হয় না তার। ঘরে এই নারীদের ভূমিকাই প্রধান।
যে নারী কর্মজীবী নন তিনিও কিন্তু বেকার নন মোটেই। এ বিষয়টি এখনও বোধগাম্য হয়নি আমাদের সমাজের। নারীরা গৃহস্থালি কাজে কিংবা সন্তান লালন-পালনে নিজেদের সদা ব্যস্ত রাখেন। ঘর-সংসারটা নারীরা বলতে গেলে একাই আগলে রাখেন বা সচল রাখেন। ঘর-সংসারের তারাই খুঁটি।
এত কিছুর পরও গৃহিণী বলে অবমূল্যায়নের ভারটাও তাদের সহ্য করতে হয়। যদিও ঘর সামলানো এক নারীর সারাদিনের কাজের রুটিন কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততার চেয়ে কোনো অংশেই কম না, বরঞ্চ বেশি। এরপরও পুরুষের কাছে শুনতে হয় কর্মক্ষেত্রের খোটা, অর্থ উপার্জনের কটাক্ষ! সংসারে এসব নারীদের নিজের খরচের টাকাটাও অনেককেই চেয়ে নিতে হয়, অনেকেই আত্মসম্মানের ভয়ে নিজের ইচ্ছাটাকে ধীরে ধীরে জলাঞ্জলি দেন।
আমাদের সমাজে এখনও এমন নারীর সংখ্যাই বেশি। তাদেরই প্রতিনিধি একজন নারী মৃন্ময়ী। দুটি কন্যা সন্তান আর স্বামী নিয়ে সুখের সংসার তার। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। ১৫ বছরের সংসার-জীবনে সংসার ও সন্তানের সুখে বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের স্বপ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াকালে স্বপ্ন দেখতেন বড় ব্যবসায়ী হবেন। কিন্তু এখন তার সময় কাটে দুই সন্তানের পড়াশুনা ও সংসার সামলিয়ে।
মৃন্ময়ীর ভাষ্যে, তার সকালটা শুরু হয় বাচ্চাদের ব্যস্ততায়। ঘুমাতে যান তাদের দুশ্চিন্তায়। নিজের বলতে কোনো সময় নেই। কর্মক্ষেত্রের মানুষ ছুটি নিতে পারেন কিন্তু আমরা পারি না। ফলে এভাবে কাটছে বছরের পর বছর।
সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া, টিফিন রেডি করা, নাচের স্কুল, আর্টের ক্লাস, কোচিং, দৌড়ঝাঁপ করে বাচ্চাদের খাওয়ানো, রান্নাবান্না- এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতে থাকতে ভুলে গেছি নিজের স্বকীয়তা। মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে ওঠা জীবনে মনে হয়, ব্যবসায়ী না হয় হতে পারিনি, একটা চাকরি করলেও পারতাম, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন মৃন্ময়ী।
স্বামীর উপার্জনে ভালোই চলে মৃন্ময়ীর সংসার। টাকা-পয়সা দিতে স্বামীর নেই কেনো কার্পণ্য। এরপরও টাকা চাইতে তার বাধে। আর কত? ইদানিং চাকরির ইচ্ছাটাই প্রবল হয়ে উঠেছে বলে জানান এই নারী।
সংসার সামলাতে হিমশিম খাওয়া মৃন্ময়ীর মতো নারীরা এও বোঝেন এ জীবন তাদের বেঁধে ফেলেছে আষ্টেপৃষ্ঠে! নিজের স্বপ্ন সফল করা বা স্বপ্ন দেখার ফুরসত তাদের হাতে আর নেই। সন্তানের দেখভাল, সংসার গুছিয়ে নীরবে কেটে যাবে বাকি জীবন। তাই তো তারা তাদের অপূরণ হওয়া স্বপ্ন সন্তানের ডানায় পূরণের চেষ্টা করেন।
বৈষম্য, নির্যাতন, কর্মক্ষেত্রের সুযোগ দেওয়ার আন্দোলনের পাশাপাশি নারী আন্দোলনে এখন যুক্ত হয়েছে গৃহ সামলানো মায়েদের আত্মমর্যাদার স্বীকৃতির দাবি। এমনকি এসব কাজের আর্থিক মূল্য দেওয়ার কথাও উঠেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভাপতি আয়েশা খানম বলেন, নারীর এখন সবক্ষেত্রে বিচরণ। সন্তান দেখভাল, ঘর সামলানো নারীরা কর্মক্ষেত্রের থেকে কম কাজ করেন না। ফলে গৃহে নারীর কাজের অবমূল্যায়ন করার কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৮
এমসি/এমজেএফ/এমএইউ/