একই সঙ্গে রাখা হয়েছে তার অপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি, দিনলিপি, রূপার ফ্রেমে বাঁধানো ছবি, প্রাচীন পদ্ধতিতে লেখার কাজে ব্যবহৃত রাজকন্যার দোয়াত-কলমসহ আরও অনেক কিছুই। যা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (৯ মার্চ) দুপুরে উদ্বোধনকৃত উত্তরা গণভবনের সংগ্রহশালায় শতাধিক দ্রব্যাদি রাখা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এসব দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করেন।
এর আগে সোমবার (০৫ মার্চ) সন্ধান পাওয়া যায় গোপনে তুলে রাখা এসব চিঠির। পরে নাটোর জেলা প্রশাসনের ট্রেজারিতে চাবিহীন একটি ট্রাঙ্ক থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া আশপাশের গ্রামে গ্রামে মানুষের বাড়িতে মিলেছে রাজবাড়ির সিন্দুক, রাজা-রানীর ছবিসহ অনেক ঐতিহাসিক জিনিসপত্র, আড়ালে থাকা মহামূল্যবান পাথরখচিত রাজমুকুট, রাজপরিধেয় এবং বইসহ আরো অনেক কিছু।
জানা যায়, ১৯৫৬ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে এ রাজপরিবার ভারতে চলে যায়। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু রাজবাড়িটিকে উত্তরা গণভবন ঘোষণা করেন। তখন থেকে এর পরিচর্যা করতো গণপূর্ত বিভাগ। কয়েকবার এখানে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে জেলা প্রশাসন রাজবাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেওয়ার পর দিঘাপতিয়ার রাজার স্মৃতিচিহ্ন খোঁজা শুরু করেন।
জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে সিন্দুক, রাজা-রাণীর ছবিসহ অনেক কিছু উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ট্রেজারিতে মহামূল্যবান পাথর খচিত রাজার মুকুট, জরির জামা, হাতির দাঁতের হাতল লাগানো ছুরি, দামি পাথর কেটে তৈরি রাজবাড়ির থালা-বাসনসহ অনেক কিছু পাওয়া যায়। এরই মধ্যে একটি ছবিও পাওয়া যায়। এটি রূপার ফ্রেমে বাঁধানো। ছবিটির পরিচয় খুঁজতে গিয়ে ফ্রেম খোলা হয়। এর পর দেখা যায়, ফ্রেমে আড়াল হয়েছিল রাজকুমারী ইন্দুপ্রভার নাম।
তিনি বলেন, রাজবংশের চতুর্থ পুরুষ প্রমথনাথের মেয়ে ছিলেন ইন্দুপ্রভা। ট্রাঙ্ক থেকে ইন্দুর হাতের লেখা ১০টি ডায়েরি বের করা হয়। এর মধ্যে একটিতে শুধু কবিতা। অন্যগুলোতে তার আত্মজীবনী। ইন্দুর কাছে বিয়ের আগে ও পরে ২৮৫টি চিঠি লিখেছেন মহেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী।
প্রতিটি চিঠির শেষে লেখা রয়েছে, ‘তোমারই মহেন্দ্র’। ইন্দুকে সম্বোধন করা হয়েছে ‘প্রিয়তমে’ হিসেবে। চিঠির পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে মান-অভিমান। ইন্দুপ্রভা কলকাতায় থাকার সময় তাকে তিনটি ঠিকানায় চিঠি দিয়েছেন। আবার ইন্দু যখন রাজবাড়িতে থেকেছেন, তখনো কলকাতা থেকে মহেন্দ্র তাকে চিঠি লিখেছেন।
দিঘাপতিয়ায় পাঠানো চিঠিপত্রে তার নাম কখনো রাজকুমারী ইন্দুপ্রভা, কখনো শ্রীমতী ইন্দুপ্রভা দেবী আবার কখনো শ্রীমতী ইন্দুপ্রভা চৌধুরানী লেখা পাওয়া গেছে। মহেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ইন্দুপ্রভার স্বামী। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। ছোট্ট ছোট্ট খামে ভরা চিঠিগুলো খুবই যত্নে ভাঁজ করে রাখা।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ১২০ বছর বা তার কাছাকাছি সময় ধরে চিঠিগুলো ওভাবেই খামের ভেতরে রয়েছে। চিঠিগুলো এখনো পড়া যাচ্ছে। একইভাবে ইন্দুর হাতের লেখা কবিতা ও তার আত্মজীবনীও পড়া যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, বাংলা ১৩০৪ সালে দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির প্রাইভেট সেক্রেটারির প্যাডে মহেন্দ্র কলকাতার ঠিকানায় ইন্দুকে লিখেছেন। বারবার তাগাদা দিয়ে খাম পাঠিয়েও ইন্দুর চিঠি পেতে দেরি হওয়ায় মহেন্দ্র তার চিঠির শেষ বাক্যে লিখেছেন, ‘একবার কলকাতায় যেতে পারলে বাঁচি’। তখন যে দোয়াত-কলম ব্যবহৃত হতো সেগুলোও ইন্দুর ট্রাঙ্কে অবিকল ছিল।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে ডায়েরির অনেক লেখাই তিনি রাজশাহীতে বসে লিখেছেন। ১৩১১ বঙ্গাব্দের নববর্ষের দিনের কথা লিখেছেন রাজশাহীতে বসে। রাজশাহীকে তখন রামপুর লেখা হতো। প্রতিটি লেখার সঙ্গে তিনি বাংলা ও ইংরেজি তারিখ বারসহ লিখেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৮
আরএ