অন্য দিনগুলোর মতো শুক্রবারও (৯ মার্চ) বিকেলে খেলতে বাসা থেকে বের হয় সে। তবে কে জানতো এই যাওয়াই হবে শেষ যাওয়া।
রাজধানীর আদাবর থানা এলাকায় নবোদয় হাউজিং এলাকায় সন্ধ্যার কিছু আগে খেলতে গিয়ে বাসার কাছেই খালে পড়ে নিখোঁজ হয় শিশু জিসান। খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৬টায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। দীর্ঘ চার ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত সোয়া ১০টায় জিসানের মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
মৃত জিসানের বাবা আবুল হাসেম হাসু পেশায় গাড়িচালক। তার স্ত্রী সুমি বেগম, মেয়ে রোকসানা আক্তার, ছেলে রতন ও জিসানকে নিয়ে নবোদয় হাউজিংয়ের বস্তিতে থাকতেন। ফরিদপুরের বালিয়াকান্দি এলাকার বাসিন্দা হাসেম দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে এখানেই বসবাস করেন।
নিখোঁজ ছেলে জিসানকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে বাবা আবুল হাসেমও খালে নেমে পড়েন। নিজের ঘরে আহাজারি করছিলেন মা সুমি বেগম।
জিসানের বড় বোন রোকসানা বাংলানিউজকে জানান, সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে জিসানকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে দেখেন তিনি। প্রতিদিনই পাশের রাস্তায় এলাকার অন্যা শিশুদের সঙ্গে খেলতে যায় জিসান। আজও যাওয়ার সময় তাই কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। জিসানও কাউকে কিছু বলে যায়নি।
কিছুক্ষণ পরই এলাকায় জানাজানি হয়, একটি ছেলে রাস্তার পাশের খালে পড়ে ডুবে গেছে। তখন জিসানের পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখোঁজি শুরু করেন। রোকসানার কাছে থাকা জিসানের ছবি সেখানকার লোকজনকে দেখালে তারা জানায়, জিসানই ডুবে গেছে।
আরও পড়ুন>>>>৪ ঘণ্টা পর শিশু জিসানকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বাবা আবুল হাসেম জানান, বাড়ি ফিরে দেখেন তার ছেলে নিখোঁজ। রাস্তায় তার ছেলেসহ কয়েকজন শিশু ফুটবল খেলছিল। এ সময় পাশের খালে বল পড়ে গেলে জিসান আনতে পানিতে নামার সঙ্গে সঙ্গেই সে তলিয়ে যায়।
আদাবর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আবু জাফর সামসুদ্দীন জানান, জরুরি সেবার নম্বর ‘৯৯৯’ এ স্থানীয়দের ফোন পেয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
দীর্ঘ চার ঘণ্টা চেষ্টার পর রাস্তার নিচের কালভার্ট থেকে জিসানকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। রাস্তার দু’পাশের খালের সংযোগ ওই কালভার্টের মাঝখানে ময়লার সঙ্গে জিসান আটকে ছিল।
উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সোয়া ১০টার দিকে শিশুটি উদ্ধার করা হয়েছে। খালটি ময়লাভর্তি হওয়ায় উদ্ধার অভিযানে আমাদের এতো সময় লেগেছে। উদ্ধারের পর শিশুটির নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ও লালা বের হচ্ছিল। তাকে শিকদার মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
পরে শিকদার মেডিকেলের দায়িত্বরত কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, শিশুটি এখানে আনার আগেই মারা গেছে। আমরা শিশুটিকে ১০টা ২৫ মিনিটে গ্রহণ করি। ইসিজি করার পর মৃত্যু নিশ্চিত হয়। ১০টা ৪০ মিনিটে শিশুটির মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৮
পিএম/এএ