ঢাকা, শুক্রবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ভালুকায় বিস্ফোরণ

‘বাঁচবো কিনা তখনো জানতাম না’ 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
‘বাঁচবো কিনা তখনো জানতাম না’  ভালুকায় বিস্ফোরণে ওই ভবনের দেয়াল ধসে পড়ে/ছবি: অনিক খান

ময়মনসিংহ: ‘রাত তখন আনুমানিক ১টা বাজে। হঠাৎ বিকট শব্দে রুমের অন্যান্যদের মতো আমারো ঘুম ভাঙে। কিন্তু ঘোর যেন কাটছিল না। ঘুমের ঘোরে সবকিছুই যেন তার কাছে দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছিল’।

ময়মনসিংহের ভালুকার মাস্টারবাড়ি এলাকার ৬তলা আরএস টাওয়ারের তৃতীয় তলায় বিস্ফোরণের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন একই তলায় পূর্ব পাশের কক্ষের একটি মোবাইল কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান (২৭)। ওই কক্ষে তিনিসহ থাকতেন আরও তিনজন।

মাসখানেক হয়েছে এ বাসা ভাড়া নিয়েছেন তিনি।  

মাহমুদুর বাংলানিউজকে বলেন, ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে আমি দরজার দিকে যেতে থাকি। দেখি দেয়াল সব ভেঙে পড়েছে। কোনো দরজা নেই। খোলা আকাশ দেখা যাচ্ছে। চারিদিকটা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। এরপর আবার কক্ষে ফিরে আসি। এরপর জীবন বাঁচাতে কোনমতে দুইতলা পর্যন্ত নেমে সেখানকার সানসেট থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ি। সামান্য আহত হলেও জীবন বেঁচেছে। অথচ তখনো জানতাম না বাঁচবো কি না।

রোববার (২৫ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে ওই ভবন থেকে প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই দুঃসহ ওই সময়কার ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরছিলেন পাবনার এ বাসিন্দা। তখনো তার চোখে-মুখে ভীতির ছাপ ছিল স্পষ্ট।  

একই কক্ষে মাহমুদুরের সঙ্গে ছিলেন আসাদুজ্জামান (২৫) ও শারিফুল ইসলাম রাসেল (২৮)। ভয়ার্ত কণ্ঠে আসাদুজ্জামান বলেন, প্রথমে মনে হচ্ছিল পুরো ভবনটিই ধ্বসে গেছে। আমি প্রথমে পেছনের বারান্দার দিকে দৌড় দেই। পরে আমরা সিদ্ধান্ত নেই দ্বিতীয় তলা থেকে লাফিয়ে পড়ার।  

একই তলায় থাকলেও অপু, শাহীন, দীপ্ত কিংবা হাফিজদের সঙ্গে কোনো পরিচয় ছিল না রাসেল, মাহমুদুর ও আসাদুজ্জামানদের। এ প্রসঙ্গে শারিফুল ইসলাম রাসেল বলেন, ‘ওদের সঙ্গে কোনদিন মুখ দেখা-দেখিও হয়নি। ’ 

বিকট শব্দে এ ভবনে বিস্ফোরণের সময়ই ৬ তলায় ছিলেন একই মোবাইল কোম্পানির আরেক কর্মকর্তা দিনাজপুরের গোলাম আযম। ২৬ বছর বয়সী এ যুবকের মধ্যে এখনো কাটেনি আতঙ্ক। বলছিলেন, আমি বিভোর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলাম। হঠাৎ বাড়ির কেয়ার টেকার চিৎকার করে আমাকে ডাকেন। আর বলেন, ভাই পালান। আগুন লাগছে।  

‘আমি প্রথমে সিঁড়ি দিয়ে চতুর্থ তলা পর্যন্ত নেমে আসি। কিন্তু তৃতীয় তলায় এতো পরিমাণ তাপ আর আগুন জ্বলছিল যে আর সিঁড়ি দিয়ে নামার সাহস পাচ্ছিলাম না। অবশেষে নিজের জীবনকে বিপন্ন করেই ঝড়ের গতিতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসি। ’ 

এর আগে শনিবার (২৪ মার্চ) দিনগত রাত ১টার দিকে ওই ভবনের তৃতীয় তলায় বিস্ফোরণে খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদ অপু প্রাণ হারান। দগ্ধ শাহীন, দীপ্ত সরকার ও হাফিজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।  

এ ঘটনায় সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা বাড়িটিকে ঘিরে রেখেছে। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে বোমা ডিসপোজাল টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।  

'গ্যাস সিলিন্ডার' বিস্ফোরিত হয় ভালুকার আরএস টাওয়ারে
ভালুকায় ৬ তলা ভবনে বিস্ফোরণ, নিহত ১, দগ্ধ ২ (আপডেট)
ভালুকায় বিস্ফোরণ, হতাহতরা কুয়েট শিক্ষার্থী
ভালুকায় বিস্ফারণে দগ্ধ ৩ জন ঢামেকে চিকিৎসাধীন
আরএস টাওয়ার বিস্ফোরণের কারণ খুঁজছে র‌্যাব-পুলিশ
ভালুকায় বিস্ফোরণ, যাচ্ছে বোম ডিসপোজাল ইউনিট

বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮ 
এমএএএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।