ঢাকা, শুক্রবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

নির্যাতিতা গৃহবধূকে গ্রাম ছাড়া করার অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
নির্যাতিতা গৃহবধূকে গ্রাম ছাড়া করার অভিযোগ

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে নির্যাতিতা এক গৃহবধূকে গ্রাম ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্যসহ মাতব্বরদের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের তিস্তার চরাঞ্চলের জগতবেড় গ্রামের অ্যাম্বুলেন্স চালক নুরুল হকের ছেলে দাদন ব্যবসায়ী লাইকুজ্জামান খোকন (৩৫) বুধবার (২১ মার্চ) তার প্রতিবেশী এক গৃহবধূকে ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণ করেন। স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে খোকনকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করেন।

পরদিন বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) রাতে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস সালামের নেতৃত্বে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি লুৎফর জামান লাইজুসহ গ্রাম্য মাতব্বররা বৈঠকে বসেন। এ সময় ওই গৃহবধূকে চরিত্রহীন আখ্যা দিয়ে এলাকার পরিবেশ রক্ষার অজুহাতে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

মাতব্বরদের এ নির্দেশে ওই গৃহবধূ ও তার স্বামী গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন।

এদিকে, লজ্জায় ও অপমানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে নির্যাতিতা গৃহবধূকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনার পরে মাতব্বরদের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে গ্রামবাসী। তারা ধর্ষকসহ এ প্রহসনের বিচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

গ্রামবাসীরা বলেন, এ প্রহসনের বিচারে টাকার জোরে ধর্ষককে বাঁচিয়ে নির্যাতিতাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এসময় ধর্ষকসহ গ্রাম্য মাতব্বরদের বিচার দাবি করেন তারা।

ধর্ষিতার স্বামী বাংলানিউজকে জানান, জীবিকার তাগিদে তিনি ঢাকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সুবাদে দুই সন্তানকে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বাবাসহ স্ত্রী বাড়িতে থাকতেন। লম্পট প্রভাবশালী খোকন এ সুযোগে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে। বিচারকরা মোটা অংকে টাকার বিনিময়ে ধর্ষককে ছেড়ে দিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তাদের গ্রাম ছাড়া করেছে। তিনি এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

রাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে জানান, ওই গৃহবধূর শ্বশুরের ডাকে তিনি বৈঠকে গিয়েছিলেন। এ সময় গৃহবধূ কোনো অভিযোগ না করায় এ ব্যাপারে কোনো বিচার হয়নি। স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরের বিষয়ে তিনি বলেন, গৃহবধূকে তার স্বামী তালাক দিতে চাওয়ায় তারা স্বাক্ষর নিতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

রাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন মোফা বাংলানিউজকে বলেন, ওই গৃহবধূর শ্বশুরের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে তাদের আইনি সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেই। স্থানীয়ভাবে কারা এ সালিশ বৈঠক করেছেন তা আমি জানি না বলেও জানান তিনি।

সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম বাংলানিউজকে জানান, এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। বিষয়টি লোক মুখে শুনে তদন্ত করতে অফিসার পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।