ঢাকা, শুক্রবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আজও সংরক্ষণ করা হয়নি বিটঘর বধ্যভূমি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
আজও সংরক্ষণ করা হয়নি বিটঘর বধ্যভূমি বিটঘর বধ্যভূমি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার যে কয়টি স্থানে গণহত্যা চালানো হয়েছে তার মধ্যে সবেচয়ে লোমহর্ষক হলো সরাইল উপজেলার বিটঘরের গণহত্যা। 

সরকারি হিসেবে এখানে ৮০ জনকে হত্যার কথা উল্লেখ থাকলেও স্থানীয়দের দাবি, এ সংখ্যা শতাধিক।  

আজও সেই সময়ের ভয়াল স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় শহীদ পরিবারের সদস্যদের।

এতো বিপুল সংখ্যক শহীদের রক্তে রক্তাক্ত যে মাটি, স্বাধীনতার ৪৭ বছেরও তা সংরক্ষণে নেয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। শহীদ পরিবারের পাশাপাশি, মুক্তিযোদ্ধাদেরও দাবি দ্রুত এ স্থানটি সংরক্ষণের।

একাত্তরের উত্তাল মার্চে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। আন্দোলনের ঝড় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলসহ বিভিন্ন থানা, ইউনিয়ন এবং গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী সরাইল থানার সদর এলাকা দখল করে নেয়। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পানিশ্বর ইউনিয়নের গ্রামগুলো ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ অবস্থান ও পারাপারের কেন্দ্র। এই সুযোগে ওইসব গ্রামে গড়ে উঠছিল মুক্তিবাহিনীর ট্রানজিট ক্যাম্প। পরিকল্পনা মতো ২৯ অক্টোবর রাতে সরাইল থানা আক্রমণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। রাজাকারদের সহায়তায় অক্টোবরের শেষে পাকিস্তানী হানাদারেরা বিটঘর ও এর আশেপাশের গ্রামগুলোতে সাঁড়াশি আক্রমণের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতো ৩১ অক্টোবর সকালে সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জ থেকে দুইশ’ পাকিস্তানী সেনা বিটঘর গ্রামটি ঘিরে ফেলে। রাজাকারেরা ঘরগুলো দেখিয়ে দেয় এবং পাকিস্তানী সেনাদের নিয়ে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে নিরীহ নিরপরাধ গ্রামবাসীকে গ্রামের পাশের ছোট খাল পাড়ে জড়ো করে। তারপর আট-১০ জনকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করতে থাকে। কাউকে কাউকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে তারা। আজও সেই ভয়াল স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় শহীদ পরিবারের সদস্যদের।

কথা হয় শহীদ আব্দুল লতিফের সন্তান ছালামত মিয়ার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় খারগরের এই বধ্যভূমিতে ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। আধা মরা রেখেই সবাইকে গণকবর দেয় তারা। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার হলেও এই গণকবরে হয়নি কোনো স্মৃতিফলক।  

এ বিষয়ে কথা হয় আরেক শহীদ আব্দুর রহমানের সন্তান আসকর আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার বাবাকে এখানে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। এখনও এখানে কোনো স্মৃতি চিহ্ন নেই। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এখানে সরকারকে ১৫ শতক জায়গা দান করা হয়েছে। যাতে শহীদদের নাম সম্বলিত স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। বিটঘর বধ্যভূমি

স্থানীয়রা বলেন, সরকারের কাছে আমাদের দাবি, এই গ্রামে যেন যারা শহীদ হয়েছেন তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে। জানতে পারে কাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের সূর্য উঠেছে।

এ বিষয়ে কথা হয় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার হারুনুর অর রশিদের সাথে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের কাছে আমাদের দাবি, দ্রুত যেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গণকবরগুলো সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিটি স্মৃতিসৌধ ও গণকবরে যেন একজন প্রহরী নিয়োগ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যেন সরকার গ্রহণ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।