নামের মধ্যে পরিচয় মেলে কেমন ছিল সে অপারেশন। সার্চ লাইটের আলো ফেলার মতো খুঁজে খুঁজে বের করে নিয়ে হত্যা, ধর্ষণের কর্মকাণ্ড চালায় পাক আর্মি।
রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোকে প্রথমে টার্গেট করে তারা। তারপর সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ে অত্যাচারের স্টিম রোলার।
সেই রাতে ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর অফিসেও হামলা চালায় পাকসেনারা। তাদের পৈশাচিক নির্যাতনের খবর যাতে পৃথিবী না জানে, সেজন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় পত্রিকা প্রকাশনা।
প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) সংরক্ষিত পত্রিকার ক্যাটালগ থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
সে সময় যে কয়েকটি পত্রিকা প্রথম সারির ছিল, সেগুলো হলো- দৈনিক ইত্তেফাক, দি আজাদ, দি পাকিস্তান অবজারভার, দৈনিক পাকিস্তান ও সংবাদ।
দৈনিক ইত্তেফাক সঙ্গত কারণেই ২৫ মার্চ থেকেই কোনো সংখ্যা বের করতে পারেনি। পত্রিকাটি ২৮ মে পর্যন্ত বন্ধ ছিল।
দি আজাদ বন্ধ ছিল ২৫ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত। সংবাদ ২৫ মার্চ রাত থেকে বন্ধ হয়েছিল। পত্রিকাটির অফিস আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে ৭১ সালে আর কোনো সংখ্যাই বের হয়নি।
পাকিস্তান অবজারভার বন্ধ ছিল ২৫ মার্চ রাত থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত। আর দৈনিক পাকিস্তান বন্ধ ছিল ২৫ মার্চ রাত থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
যুদ্ধের সময় সীমিত আকারে কিছু পত্রিকার সংখ্যা মাঝে মাঝে প্রকাশিত হলেও তাতে পাকিস্তানের নির্যাতনের তেমন কোনো খবর প্রকাশিত হতো না কিংবা করা যেতো না।
পিআইবি’র লাইব্রেরিয়ান রবিউল আনাম বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার, বাংলা একাডেমি ও জাতীয় গ্রন্থাগারের লিস্ট থেকে এ ক্যাটালগ তৈরি করা হয়েছে। জাতীয় পত্রিকাগুলো আসলে ১৮ ডিসেম্বর প্রথম পূর্ণাঙ্গভাবে বের হয়। এর আগে কোনো পত্রিকাকেই আসলে তেমনভাবে কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হয়নি। পাকিস্তান সরকারের পত্রিকা বের হতো, কিন্ত সেখানে নির্যাতনের চিত্র খুব একটা থাকতো না।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের কোনো পত্রিকার কপিই পিআইবিতে সংরক্ষিত নেই। মাইক্রো ফিল্মের মাধ্যমে কিছু পত্রিকা সংরক্ষণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। বাংলা একাডেমির কাছে কিছু পত্রিকার কপি আছে। সেগুলো যুদ্ধাপরাধের বিচারকার্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল সিজ করেছে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের পাক শাসক গোষ্ঠীর ভরাডুবি হয়। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হলেও বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ইতিহাসের এক নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ইয়াহিয়া-আইয়ূব-ভূট্টু কুচক্রীরা। তারা একদিকে আলোচনার নামে প্রহসন শুরু করে দেয় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে, অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানে বাড়ায় সৈন্য সমাহার। এদিকে ক্ষোভে ফেটে পড়া সাত কোটি বাঙালি প্রস্তুত হতে থাকে স্বাধীনতার আন্দোলনের দিকে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে চূড়ান্ত নির্দেশনা আসায় শুরু হয় প্রতিরোধের প্রস্তুতি। ৭ মার্চের পর সারাদেশে বিক্ষোভ আন্দোলন বাড়তে থাকলে, বাড়তে থাকে হত্যাকাণ্ড। অবশেষে সকল গণতান্ত্রিক পথকে রুদ্ধ করে দিয়ে ২৫শে মার্চ রাতেই দমননীতির ঘৃণ্যতম অধ্যায় রচনা করে পাক শাসকগোষ্ঠী।
১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬০টি পেয়েছিলো আওয়ামী লীগ। এছাড়া পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৮১টি আসন, পিএমএল (কাইযূম) ৯টি, পিএমএল (কনভেশন) ৭টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ৭টি, মারকাজি জমিয়তন-উলেমা-পাকিস্তান ৭টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ওয়ালী) ৬টি, জামায়াত-ই-ইসলামী ৪টি (৬শতাংশ ভোট পেয়েছিলো), পিএমএল (কাউন্সিল) ২টি, পিডিপি ১টি আসন পেয়েছিলো। অবশিষ্ট ১৬টি আসন পেয়েছিলো স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ৫ কোটি ৬৯ লাখ ৪১ হাজার ৫০০ ভোটারের মধ্যে ৬৫ শতাংশ ভোটার ওই নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলো। ৭০ সালেই পাকিস্তানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ সংখ্যগরিষ্ঠতা পায়।
অন্যদিকে প্রাদেশিক পরিষদগুলোতে মোট আসন ছিলো ৬০০টি। এ নির্বাচনে শুধু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান নয়, সবগুলো প্রদেশ মিলিয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। এতে আওয়ামী লীগ ২৮৮টি আসন পেয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলো।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৮
ইইউডি/এমএইউ/