সোমবার (২৬ মার্চ) সকালে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় এই পদযাত্রার। ‘শোক থেকে শক্তি: অদম্য পদযাত্রা’ শিরোনামে এ কর্মসূচির আয়োজক অভিযাত্রী ক্লাব।
রাজধানীর ভারতেশ্বরী হোমস্ স্কুল ও মানিকনগর মডেল হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের একটি দল অংশ নেবে পদযাত্রায়। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ট্যুরিস্ট সোসাইটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব, বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, হিমু পরিবহন, ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ’র সদস্যরা নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষে কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন।
অভিযাত্রায় অংশগ্রহণ করা সবার হাতে জাতীয় পতাকা। সাদা টি-শার্টে স্মৃতিসৌধ অংকিত। এরপর অভিযাত্রী দল এগিয়ে যায় জগন্নাথ হল বধ্যভূমির দিকে। সেখানে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে সংগঠিত গণহত্যার ভয়াল স্মৃতি বিজড়িত বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তারপর নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, জিগাতলা হয়ে পৌঁছে বীর তাজউদ্দিন আহমেদের স্মৃতি বিজড়িত বাসভবনের সামনে। এসময় আরেকদল যুক্ত হয়।
এরপর অভিযাত্রা সকাল সাড়ে ৮টায় পৌঁছে মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজ প্রাঙ্গণে। সেখানে রয়েছে বর্বর পাকিস্তান বাহিনীর টর্চার সেল। সেই বেদনার ইতিহাস স্মরণ করে অভিযাত্রীদল রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পৌঁছায় সকাল সাড়ে দশটায়। সেখানে থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মিরপুর মাজার রোড, আমিনবাজার ব্রিজ হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে পদযাত্রা।
অভিযাত্রায় অংশগ্রহণ করা ইউসুফ বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৭১ সালে ৩৮ জন বাঙালি তরুণ কলকতাসহ ভারতবর্ষে পদযাত্রায় বের হন। মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের বর্বরতার কথা জানান। আমরা সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। আজকে আমরা পথে পথে সেই ইতিহাস স্মরণ করছি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও জানছি। এবং এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে যেন সারা জীবন চলতে পারি সেই শপথও করবো।
জানা যায়, অভিযাত্রী দল দিয়াবাড়ি ঘাট থেকে নৌকায় চড়বে। এভাবে তুরাগ পাড়ি দেবেন তারা। দুপুরের আগে আগে পৌঁছে যাবে সাদুল্ল্যাপুরের শতবর্ষী বটমূলে। আকরাইন এলাকায় পৌঁছবে দুপুর ২টা নাগাদ। এখান থেকে পদযাত্রায় যুক্ত হবে আকরাইন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তারপর দল যাবে কলমা গ্রামের দিকে। পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিকামী বাঙালির সম্মুখযুদ্ধের স্মৃতি ধারণ করে আছে কলমা গ্রাম। এখান থেকে পদযাত্রীদল এগিয়ে যাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। বিকেল ৪টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছার কথা।
এর আগে ডেইরি ফার্ম গেটে শহীদ টিটোর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন সবাই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, হিমু পরিবহন সাভার এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অভিযাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে দলটি চলে যাবে ক্যাম্পাসের অপর প্রান্তের স্কুল গেটে। তারপর জাতীয় স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন অভিযাত্রীরা। দেশ গড়ার নতুন শপথ নেবেন। আরও কিছু আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শেষ হবে অদম্য পদযাত্রা।
এই ব্যতিক্রমী আয়োজনের সূচনা হয়েছিল ২০১৩ সালে। পর্বতারোহীদের সংগঠন অভিযাত্রী প্রথমবারের মতো এ আয়োজন করে। তখন ছিল শুধুই পদযাত্রা। ২০১৬ সাল থেকে বিশেষ মাহাত্ম্য যোগ হয়। আরও অর্থবহ হয়ে উঠে। কারণ ওই বছর থেকে উদ্যোগটির সঙ্গে যুক্ত হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৮
এসকেবি/জেডএস