সূত্র জানায়, দুর্ঘটনার মাত্র এক মাসের মধ্যেই তদন্তকাজ সম্পন্ন করে এনেছে পুলিশ। অভিযোগপত্রে জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের চালক, দুই সহকারী ও দুই বাস মালিকসহ মোট ছয়জনকে আসামি করা হচ্ছে।
গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব। একই ঘটনায় আহত হয় আরও ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় দিয়া খানম মীমের বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন ফকির ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ডিবি সূত্র জানায়, জাবালে নূর পরিবহনের ঘাতক বাসচালক মাসুম বিল্লাহ, তার সহকারী এনায়েত হোসেন, বাসটির মালিক শাহাদাত হোসেন এবং পাল্লা দেওয়া অপর বাসের চালক জোবায়ের সুমন, সহকারী কাজী আসাদ এবং বাসটির মালিক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। একই পরিবহনের আরেকটি বাস প্রথমে পাল্লাপাল্লিতে জড়ালেও সেটি দুর্ঘটনার অনেক আগেই পেছনে পড়ে যায়। তাই ওই বাসের চালক সোহাগ ও তার সহকারী রিপনকে আসামি করা হচ্ছে না।
অভিযুক্ত হতে যাওয়া ছয়জনের মধ্যে এক চালকের সহকারী কাজী আসাদ ও মালিক জাহাঙ্গীর আলম এখনো পলাতক রয়েছেন। এ মামলায় দুই চালক মাসুম ও জোবায়ের ও এক বাসের মালিক শাহাদাত হোসেন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আদালতে বাস চালক-মালিকের জবানবন্দি ও তদন্তের ভিত্তিতে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘাতক চালক মাসুম গত এক বছর ধরে জাবালে নূর পরিবহনের বাস চালাচ্ছেন। এর জন্য প্রতিদিন গাড়ির মালিককে ৭০০ টাকা করে দিতেন তিনি। ঘটনার দিন ২৯ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় আগারগাঁও থেকে বাস নিয়ে (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৯২৯৭) নতুন বাজারের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। অধিক যাত্রী আগেভাগে ওঠাতে পারলে বেশি টাকা পাওয়া যাবে এমন আশায় জাবালে নূরের অপর বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৭৫৮০) সঙ্গে ইসিবি চত্বর থেকে পাল্লাপাল্লি শুরু হয়। এর ফলে ফ্লাইওভারের উপরের দু’পাশের রেলিংয়েও কয়েকবার বাস দু’টির ঘসা লাগে। অপর বাসটি ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে রাস্তা ব্লক করে দাঁড়িয়ে থাকায় বাম পাশ দিয়ে বেপরোয়াভাবে ফুটপাতে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীর গায়ের ওপর বাস তুলে দেন চালক মাসুম।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪, ২৭৯ ও ৩৪ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে। ৩০৪ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন। কোনো কাজের কারণে মৃত্যু হতে পারে অথবা মৃত্যু ঘটানোর অভিপ্রায় থেকে ও মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে এমন গুরুতর আঘাত করলে সংশ্নিষ্ট ব্যক্তি ৩০৪ ধারায় অভিযুক্ত হন। বেপরোয়া গাড়ি চালানোয় এ মামলার চার্জশিটে ২৭৯ ধারা যুক্ত হচ্ছে। আর জড়িতদের ‘কমন ইনটেনশন’ ৩৪ ধারাতেও তারা অভিযুক্ত হবেন।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ মামলার তদন্ত প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে। শিগগির আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৮
পিএম/আরবি/