টেকনাফ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের আলিয়াবাদ গ্রামের মৃত আমির হোসেন ড্রাইভারের ছেলে রহিম। এক সময় সকলের সহযোগিতায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে তিনি গ্রামে একটি ফার্নিচারের দোকান দিয়েছিলেন।
অল্প দিনের ব্যবধানে তিনি বনে যান টেকনাফের কোটিপতিদের একজন। এখন তার রয়েছে কোটি টাকার জমি, বাড়ি এবং গাড়ি।
তবে সেটা কোনো আশ্চর্য প্রদীপের সহযোগিতায় নয়, সর্বনাশা ইয়াবার ছোঁয়ায় তিনি কাঠমিস্ত্রি থেকে কোটিপতি হয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ আলিয়াবাদের লোকজন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিৎ বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, রহিম ও তার ভাই চিহ্নিত ইয়াবা বিক্রেতা। তারা পলাতক রয়েছেন। তাদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্র জানায়, অভাব-অনটেনের সংসারের সন্তান রহিম। ভাগ্য বদলাতে তিনি কয়েক বছর আগে বিদেশে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিড়ম্বনায় পড়ে কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি দেশে ফিরে আসেন। এরপর থেকে তার সময় কাটছিল ভবঘুরে হিসেবে। সেসময় তার কিডনিতে ঘা রোগ দেখা দেয়।
কিন্তু অর্থাভাবে তার চিকিৎসা হচ্ছিল না। তখন গ্রামের তরুণরা চাঁদা তুলে রহিমের চিকিৎসা ভার বহন করেন। এরপর তিনি এলাকায় একটি ফার্নিচারের দোকান দেন। তাও বেশিদিনের নয়। দৃশ্যমান ব্যবসা বলতে কয়েক মাসের সেই দোকান ঘর। কিন্তু তারপরই রহিমের ভাগ্য বদলাতে শুরু হয়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রহিমের এক প্রতিবেশী বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামে বা তার আশপাশে কেউ জমি বিক্রি করছে শুনলেই তা দ্বিগুণ দামে কিনে নিচ্ছেন রহিম। এভাবে শুধু নিজ গ্রামেই রহিমের অন্তত পাঁচ কোটি টাকার জমি কেনা হয়ে গেছে। প্রত্যেক জমিতে নির্মিত হচ্ছে উঁচু উঁচু ভবন। ইতোমধ্যে একটি ভবন চারতলা পর্যন্ত উঠে গেছে। বাকিগুলোর দ্রুত নির্মাণ কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রহিমের কোটি টাকার সম্পদের মধ্যে রয়েছে সদ্য কেনা টেকনাফে কয়েক কোটি টাকার জমি, পাঁচ থেকে ছয়টি নোয়া গাড়ি। আছে জিপ, কার ও মোটরসাইকেলও। এছাড়া রয়েছে ঢাকা ও কক্সবাজারের কলাতলীতে নামে-বেনামে ফ্ল্যাট। তার ঢাকার ফ্ল্যাটটি জাহাঙ্গীর নামে কেনা বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে টেকনাফ থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আতিক উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, মাস তিনেক আগে জাহাঙ্গীর নামে এক লোককে ইয়াবাসহ আটক করা হয়। সেসময় তার দেওয়া তথ্য মতে, সেই মামলার আবদুর রহিম ও তার তিন ভাই নুর হোসেন, আব্দুল্লাহ ও নুরুল আলম ছোটকে আসামি করা হয়। এরপর মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে রহিমের অঢেল সম্পত্তির খোঁজ মিলে। তাকে ও তার ভাইদের ধরতে পুলিশ কয়েক দফা অভিযান চালায়।
একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, ইয়াবা বিক্রি নিয়ন্ত্রণের জন্য রহিমের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। সেই সিন্ডিকেটে রহিম ও তার তিন ভাই ছাড়াও তার কয়েকজন নিকট আত্মীয় রয়েছে।
সূত্রটি জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির সময়ও রহিম ঢাকায় অবস্থান করে নির্বিঘ্নে ইয়াবা বিক্রি চালিয়ে গেছেন।
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান কিছুটা শিথিল হওয়ায় রহিম ফিরে আসেন এলাকায়। সিন্ডিকেটের লোকজনকে পাহাড়ায় বসিয়ে অবস্থান করেন অলিয়াবাদ এলাকায় নিজ বাড়িতে। সেইসঙ্গে ইয়াবা বিক্রিও চালিয়ে যাচ্ছেন কোনো বাঁধা ছাড়াই। এদিকে, রহিম ও তার ভাইদের অবৈধ সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দৃশ্যমান ব্যবসা ছাড়া অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এ প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ের উপ সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, রহিম ও তার এক ভাইয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগ তদন্ত করে এবং তাদের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ পরিচালক মাহবুব রহমান বাংলানিউজকে বলেন, রহিম ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানকার নির্দেশনা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৮
টিটি/টিএ