ঢাকা, শুক্রবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ঝুঁকিপূর্ণ খুলনার ডেল্টাঘাট, দুর্ঘটনার শঙ্কা!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৮
ঝুঁকিপূর্ণ খুলনার ডেল্টাঘাট, দুর্ঘটনার শঙ্কা! এক সময় খুলনার প্রধান ঘাট এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে

খুলনা: জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে খুলনার ভৈরব নদের ডেল্টাঘাটের পন্টুন ও গ্যাংওয়ে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) পরিচালিত পরিত্যক্ত এ ঘাটটির এসব স্থাপনা যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এতে ক্ষতি হতে পারে কয়েক কোটি টাকার সরকারি সম্পদ। ঘটতে পারে প্রাণহানির মতো বিয়োগান্তক ঘটনা।

অভিযোগ রয়েছে, ২০০১ সালে ডেল্টাঘাটের পন্টুন ও গ্যাংওয়ে নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। পরে পন্টুনের বড় ধরনের (ডকিং) মেরামত কাজেও অনিয়ম হয়।

যে কারণে এতো তাড়াতাড়ি পন্টুনের এ জরাজীর্ণ অবস্থা।

শনিবার (০১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে খুলনার বড়বাজার সংলগ্ন ডেল্টাঘাট ঘুরে দেখা গেছে, গ্যাংওয়েটি একদিকে কাত হয়ে গেছে। কাঠ ভেঙে পড়ে ফাঁক ফাঁকা হয়ে গেছে। কাঠে ধরেছে পচন। পন্টুনে জং ধরেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পন্টুনে বসবাসকারী বিআইডব্লিউটিসির কর্মচারীরা গ্যাংওয়ের উপর দিয়ে চলাচল করছেন। আর গ্যাংওয়ে নদীগর্ভে বিলীন হলে ঘাট লাগোয়া মসজিদ ও কলার আড়তও নদীতে ভেঙে পড়বে। জরাজীর্ণ লক্কর-ঝক্কর গ্যাংওয়ের উপর বসে বড়বাজারের শ্রমিক ও যুবকরা অবসর সময় কাটান। ভৈরব নদের পাড়ের শহর রক্ষাবাঁধের অনেক স্থান নদীতে ভেঙে গেছে।

পন্টুনে বসবাসকারী কর্মচারী আব্দুল করীম বাংলানিউজকে বলেন, চার বছর ধরে গ্যাংওয়ে ও পন্টুন ব্যবহারের অনুপযোগী। দিনদিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে ঘাটটি। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারাতে পারেন পন্টুনে বসবাসকারী, পন্টুন সংলগ্ন মসজিদের মুসল্লি ও কলার আড়তের লোকজন।  

তিনি জানান, ডেল্টাঘাটে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন ৭ জন। এরমধ্যে ৪ জন লস্কর, একজন ভান্ডারি, একজন সারেং। এছাড়া বিআইডব্লিউটিসি’র রকেট স্টিমারে মালামাল বুকিং অফিসে একজন দেখাশোনার কাজ করেন।

কলার আড়তের প্রবীণ আবু তাহের বলেন, ৪৭ বছর ধরে এ ঘাটের পাশের কলার আড়তে ব্যবসা করি। কোনো এক সময় এটিই ছিল খুলনার প্রধান ঘাট। রকেট, স্টিমার এ ঘাটে ভিড়তো। মালামাল বুকিং অফিসে লোকজনের ভিড় লেগেই থাকতো। বড় বাজারের সব মালামাল এ ঘাট থেকে আনা নেওয়া করা হতো। কিন্তু ঘাটটি চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা এখানে ব্যবসা করছি।
রকেট-স্টিমারের মালামাল বুকিং অফিসপন্টুন ও গ্যাংওয়ে দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে, তারা অতি দ্রুত ঘাটটি সংস্কার ও চালুর দাবি জানান।

বড়বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, দীর্ঘ বছর এ ঘাটে সংস্কারের ছোঁয়া না লাগায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে করে আমাদের কাছের ডেল্টাঘাট রেখে দূরের ঘাট থেকে মালামাল আনা নেওয়া করতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসি’র খুলনা অফিসের ম্যানেজার (কমার্স) আবদুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, ডেল্টাঘাট পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। যেকোনো সময় কোটি কোটি টাকার সম্পদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। পাশে মসজিদ ও কলার আড়ৎ আছে। আমাদের ইন্নালিল্লাহ পড়া ছাড়া কিছুই করার নেই।

তিনি জানান, মাঝে সংস্কারের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু বাজেট বেশি হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেটি বাতিল করে দিয়েছে। নতুন করে প্রস্তাবনা পাঠানোর কথা ছিলো সেটি হয়েছে কি-না খুলনা অফিসের জানা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২০ ঘণ্টা,  সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৮
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।