জন্মদিনের আগের দিন রোববার (২ সেপ্টেম্বর) ঘাতক বাস কেড়ে নিয়েছে তার বুকের ধন রূপনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) উত্তম কুমার সরকারের জীবন। সোমবার ঢাকা থেকে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হচ্ছে।
ছেলের সঙ্গে ঢাকায় থাকতেন মা কামনা রানী সরকার। ঈদের ছুটিতে টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌরসভার পশ্চিম বেতডোবা গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। রোববার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ছেলের জন্য পায়েস রান্না করে ঢাকায় যাওয়ার কথা তার। কিন্তু ওই দিন বিকেলে আসা একটি ফোন কলে ছেলের মৃত্যুর খবরে থেমে যায় সব। ছেলেকে আর পায়েস খাওয়ানো হলো না তার। শোকে বিছানায় পড়ে গেছেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো জানাচ্ছিলেন নিহতের বৌদি।
রোববার ঢাকায় ঈগল পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হন এসআই উত্তম সরকার। সোমবার বিকেলে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র। শুধু স্বজনরা নন, উত্তমের মৃত্যুতে কাঁদছে যেন পুরো গ্রাম।
উত্তম কুমার সরকার কালিহাতী আরএস হাইস্কুল থেকে এসএসসি, কালিহাতী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর ভর্তি হন ভারতের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ২০০৮ সালে মার্কেটিং-এ বিবিএ সম্পন্ন করে দেশে আসেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে যোগ দেন। নিজ যোগ্যতা ও মেধায় মাত্র ছয় বছরেই উপপরিদর্শক (এসআই) পদ লাভ করেন। ২০১৫ সালে ঢাকার ধামরাই উপজেলার মেয়ে তমা চৌধুরীকে বিয়ে করেন তিনি।
মায়ের রুমের পাশের রুমে ৪৮ দিন বয়সী মেয়ে উপমাকে কোলে নিয়ে বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন উত্তমের স্ত্রী তমা সরকার। কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো, আমাদের মেয়ের কী হবে? ২ সেপ্টেম্বর ওর জন্য কেক, গিফট কিনতে যাওয়ার কথা ছিল। সবসময় ওর সব পছন্দের খাবারগুলো রান্না করে দিতাম, এখন কাকে রান্না করে খাওয়াবো?
আগামী বছর জন্মদিনে স্ত্রী, কন্যাসহ ভারতে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল বলেও বিলাপ করতে করতে বলছিলেন তিনি।
এসময় স্বামী হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে শোক জানাতে আসা মানুষের মধ্যেও। এটি দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে তারাও দ্রুততম সময়ে এর বিচারের দাবি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৮
এসআই