এর ওপর বাংলাদেশ ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে-এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে ঢাকাকে জরুরি সতর্ক বার্তা দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের অরুণাচল ও আসাম হয়ে বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র নদ ফুলে-ফেঁপে তলিয়ে যেতে পারে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চল।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচ থেকে ছয় দিন ধরে পানি বাড়তে শুরু করেছে পদ্মায়।
প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। এর মধ্যে গত ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার। ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ৯৪ সেন্টিমিটার, ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ১৭ দশমিক ০০ সেন্টিমিটার।
শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার। রাজশাহীতে পদ্মা নদীর বিপদসীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার। ফলে রাজশাহীতে পদ্মার পানি শনিবার বিপদসীমার মাত্র ১ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে হু হু করে পানি বাড়লে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রাজশাহীতে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে স্রোতস্বিনী পদ্মা।
তবে অতীতের পরিসংখ্যান টেনে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ রিডার এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, উৎকণ্ঠা থাকলেও এখনই আতঙ্কের কিছু নেই। ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট রাজশাহীতে পদ্মার পানির প্রবাহ উঠেছিল সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার। এরপর আর বাড়েনি। বরং পর দিন ২৯ আগস্ট থেকে পদ্মার পানি আবারও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
এনামুল হক আরও বলেন, গেল ১৫ বছরে রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা (১৮.৫০) অতিক্রম করেছে মাত্র দু’বার। এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা নয় বছর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। কেবল ’০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার। এর পর ’১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই বছর পদ্মা নদীর সর্বোচ্চ উচ্চতা দাঁড়িছিল ১৮ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার।
এদিকে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ-এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে ঢাকাকে জরুরি সতর্ক বার্তা দিয়েছে নয়াদিল্লি। তাই পরিস্থিতি মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আর ভারতের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বন্যা হলে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের কৃষি ফসল ও মানুষ ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পানি বিশেষজ্ঞ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারোয়ার জাহান বাংলানিউজকে বলেন, উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলে বিশেষ করে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও রাজবাড়ী এলাকায় ফসলের ক্ষতি ও ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হচ্ছে মধ্যাঞ্চল যেগুলো আছে সেগুলো প্লাবিত হবে এবং ভাটার সময় পর্যন্ত কয়েক দিন স্থায়ী থাকবে। তাই এ সময় মানুষকে বাঁচাতে হলে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে বলেও মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
তবে কোনো আতঙ্ক নয়, পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের এখনই প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দিল্লির সতর্ক বার্তাকে তারা এবার মোটেও হালকাভাবে নিচ্ছেন না। দিল্লির সতর্ক বার্তা পাওয়ার পর পরই ব্রহ্মপুত্র নদ ছাড়াও পদ্মা ও যমুনাছাড়া সংশ্লিষ্ট নদীর তীরবর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকার গভীর পর্যবেক্ষণে কর্মকর্তা মাঠে নেমেছেন বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের যে অবকাঠামো রয়েছে তা যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই ব্যাপারে তারা তদারকি শুরু করেছেন। জরুরি অবস্থা তৈরি হলে এগুলো যেন রক্ষা করা যায় সেজন্য তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আতঙ্ক নয় বরং পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের এখনই প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছে পাউবো।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ’১৬ সালের ২১ জুলাই পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের ৫ কিলোমিটার এলাকা রক্ষায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২৬৮ কোটি ১৭ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় রাজপাড়ার বুলনপুর থেকে পূর্বে পবার সোনাইকান্দি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার নদীপাড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি নদীর ৬ কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং করা হবে।
এছাড়া ৩টি গ্রোয়েনও টেকসই করা হচ্ছে এই প্রকল্পের আওতায়। ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা যাবে বলে জানান পাউবোর এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৮
এসএস/এএটি