সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে তিনটি প্রকল্প নির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
নতুন প্রকল্প তিনটি হচ্ছে- কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি বিষয়ক প্রকল্প, বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন এবং আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ)।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে মোদী বলেন, কিছুদিন আগে কাঠমান্ডুতে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয়। এর আগেও শান্তি নিকেতন এবং গত এপ্রিলে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের সময় লন্ডনেও দেখা হয়েছিলো। আমি খুবই আনন্দিত আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে আরেকবার যোগাযোগের সুযোগ হলো।
তিনি বলেন, আমি আগেও কয়েকবার বলেছি- প্রতিবেশী দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রতিবেশী সুলভ সম্পর্ক বজায় থাকাটা জরুরি। যখন মন চায় কথা হবে, যখন মন চায় সাক্ষাৎ হতে হবে, এসব বিষয়ে আমাদের প্রটোকলে বাধা পড়ে থাকলে চলবে না। আর এই নৈকট্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।
মোদী বলেন, অনেক সাক্ষাতের মধ্যেও এটি আমাদের মধ্যকার চতুর্থ ভিডিও কনফারেন্স এবং শিগগির আরো একটি ভিডিও কনফারেন্স হওয়ার কথা রয়েছে। এই ভিডিও কনফারেন্সের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- আমাদের দুই দেশের সহযোগিতামূলক প্রকল্পের শুভারম্ভ বা উদ্বোধন, যা কোনো ধরনের ভিআইপি সফরের জন্য অপেক্ষা করে থাকে না।
‘যখনই আমরা কানেকটিভিটির কথা বলি, তখনই ১৯৬৫ সালের আগের যোগাযোগ পুনরায় প্রতিষ্ঠায় আপনার (শেখ হাসিনা) উদ্যোগের কথা প্রথমে মনে পড়ে। আর আমার জন্য এটি খুবই স্বস্তির বিষয় যে, আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে একাধারে একটির পর একটি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি। ’ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, আজ আমরা আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বাড়িয়েছি এবং রেল যোগাযোগকে আরো প্রসারিত করতে নতুন করে দুটি প্রকল্প শুরু করেছি।
‘২০১৫ সালে আমি বাংলাদেশকে ৫০০ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করার পরিকল্পনার কথা জানাই। আর এজন্য পশ্চিম বাংলা থেকে বাংলাদেশে ট্রান্সমিশন লিংক কাজে লাগানো হচ্ছে। এই কাজে সহযোগিতার জন্য আমি পশ্চিমবঙ্গ ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই প্রকল্প শেষ হওয়ায় এখন ১.১৬ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত থেকে বাংলাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মেগাওয়াট থেকে বিদ্যুৎ গিগাওয়াটে পৌঁছানোর এই কোয়ান্টাম জাম্প আমাদের দুই দেশের সোনালী অধ্যায়ের প্রতীক। রেলের ক্ষেত্রেও আমাদের যোগাযোগ ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
‘এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সংযোগ এবং ভারতের সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি আমাদের সহযোগিতার প্রকৃষ্ট উদাহারণ। ’
নতুন প্রকল্প বিষয়ে মোদী বলেন, আখাউড়া-আগরতলা রেল কানেকটিভিটির কাজ পুরো হলে আমাদের আন্তঃদেশীয় সংযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি যোগসূত্র স্থাপিত হবে। এই প্রকল্পে সহায়তার জন্য আমি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যে মহৎ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন- ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা; তার লক্ষ্য সফল করার ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করতে পারাটা একটি গর্বের বিষয়।
‘আমি বিশ্বাস করি যেভাবে আমরা আমাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করবো এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে হৃদ্যতা শক্তিশালী করবো, সেভাবেই আমরা উন্নতি এবং সমৃদ্ধির নবদিগন্ত উন্মোচিত করতে সক্ষম হবো। ’
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে নরেন্দ্র মোদী আবারও বাংলায় বলেন, ‘আজ থেকে আমরা আরো কাছে এলাম, আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর হলো। ’
যৌথ ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮
এমইউএম/এমএ/