এদিকে, পানির স্রোতে সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার তীরবর্তী এলাকায় নদী ভাঙনে গত ১০ দিনে অন্তত দুই হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। গৃহহীন অধিকাংশ পরিবার উঁচু জায়গা ও বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, নদ-নদীর পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মাঠে পানি উঠেছে। এছাড়া বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলাচলের রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা উপস্থিত হলেও শিক্ষার্থীরা আসতে পারছে না। চার উপজেলার ৫৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৪টি, ফুলছড়িতে ১৩টি, সাঘাটায় ১৩টি ও গাইবান্ধা সদরে ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
তিনি আরও জানান, এসব বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সাময়িক ক্ষতি হচ্ছে। তবে পানি কমে গেলে বিকল্প ব্যবস্থায় পাঠদান দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হবে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে চরাঞ্চলে আরও বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হতে পারে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নবী সরকার বাংলানিউজকে জানান, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে কাপাসিয়া, হরিপুর, বেলকা, শ্রীপুর, কঞ্চিবাড়ী ও চণ্ডিপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এছাড়া পানির স্রোতে এসব এলাকার অন্তত দেড় হাজার পরিবারের বসতভিটে, আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্রোতের কারণে ভাটি কাপাসিয়া চরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশিভাগ অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে চাল ও শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার কঞ্চিপাড়া, ফজলুপুর, এরন্ডাবাড়ী, উড়িয়া ও গজারিয়া ইউনিয়নে অন্তত ৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি এসব পরিবারের মানুষ তাদের গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সেইসঙ্গে বেশ কিছু এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে গত সাতদিনে তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যা ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। বুধবার থেকে তালিকা ধরে প্রায় ৯শ' ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চালসহ শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। গৃহহীন পরিবারের পূনর্বাসনসহ বন্যার্ত মানুষের জন্য আরো ত্রাণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে সরকারের কাছে।
গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী বাংলানিউজকে জানান, নদ-নদীর পানি বাড়ায় সদর উপজেলাসহ চার উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ১৯ ইউনিয়নের ৮৪ গ্রামের প্রায় ১৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন বন্যার্ত মানুষের তালিকা তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে তালিকা ধরে এসব মানুষের মধ্যে ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১০০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ শুরু করা হয়েছে। এছাড়া বন্যার্ত মানুষের জন্য আরও ত্রাণ সহায়তা চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুহুল আমীন জানান, বন্যার পানিতে চার উপজেলার দেড় হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত ও বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এসব ফসল বিনস্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে দ্রুত পানি কমলে এসব ফসল রক্ষা পাবে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতে নদী তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। সেইসঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ ও ভাঙন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে।
তিনি আরও জানান, উজানের ঢলে ব্রক্ষপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা, যমুনা, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি অপরিবর্তীত রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সবক’টি নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮
আরএ