এ চারটি বাঁশের মাথায় শক্তভাবে নাইলন দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় একটি জাল। খুঁটির সঙ্গে মাটি বরাবর দু’টি বাঁশ বেঁধে রাখা হয়।
পারুনির ওপর দাঁড়িয়ে একজন মানুষ ভর বাঁশে পা রেখে চাপ দিয়ে পানিতে ফেলা জাল হাতের সাহায্যে ওপরে উঠিয়ে আনা হয়। এরপর জালের ভেতর থেকে আবর্জনা আলাদা করে মাছগুলো আফাজাল বা অন্যকোন বাসনে রাখা হয়। আর মাছ ধরার এ প্রক্রিয়াটি ছিপ বা ঝিটকি জাল নামে পরিচিত।
এ জাল ব্যবহার করে বছরের প্রায়ই সময় বড় বড় নদীতে কমবেশি মাছ ধরা হয়। তবে প্রত্যেক বছর বন্যায় মাছ ধরার কাজে ব্যাপকহারে এ জাল ব্যবহার করেন বানভাসি মানুষগুলো। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বেশ আগেই বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বে অংশে গোড়া থেকে অনেকখানি ওপরে অবস্থান করছে সেই পানি।
সারিয়াকান্দির রৌহদহ-কামালপুর পর্যন্ত রয়েছে প্রায় ৮ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ধুনটের মাধবডাঙা থেকে উত্তর সহড়াবাড়ী পর্যন্ত রয়েছে প্রায় ৭ কিলোমিটার বাঁধ। এছাড়া সোনাতলা উপজেলায় রয়েছে আরো কয়েক কিলোমিটার বাঁধ। যমুনার পানি বেড়ে এসব এলাকায় বাঁধের ভেতর অংশে অবস্থান নিয়েছে। এতে বাঁধ বরাবর পূর্বাংশ দিয়ে বিশাল জলাধার সৃষ্ট হয়েছে। এসব জলাধারে দিনরাত শতশত ছিপ বা ঝিটকি জাল ফেলা হচ্ছে। যদিও এখন আশানুরূপ মাছ মিলছে না।
যমুনায় বন্যার পদধ্বনি দেখা দেওয়ায় বাঁধের এ বিশাল অংশজুড়ে সারি-সারি ছিপ জাল বানিয়ে পানিতে ফেলা হচ্ছে। বানের সময় এ ছিপ জালগুলো অসংখ্য বানভাসি মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম একটি মাধ্যম হয়ে থাকে।
লাল মিয়া, সামছুল বারী, মছির উদ্দিন, ফজলু মিয়া বাংলানিউজকে জানান, এসব জাল ব্যবহার করে এলাকার নারী-পুরুষ মাছ ধরে থাকেন। জালের মাথার অংশ পানিতে ডুবে দেওয়া হয়। বেশ কিছুক্ষণ পানিতে ডুবে রাখা হয়।
এরপর জালের গোড়ায় লাগানো ভর বাঁশের ওপর পা দিয়ে জোরে চাপ দেওয়া হয়। দ্রুত হাতের সাহায্যে জাল ওপরে তুলে আনা হয়। জালের ভেতর ওঠে আসে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। পরে মাছগুলো আফাজাল, খালই (স্থানীয় ভাষায়) অথবা অন্য কোনো বাসনে রাখা হয়।
এসব ব্যক্তিরা জানান, এখন তেমন একটা মাছ জালে উঠছে না। তবে বন্যা দেখা দিলে এসব জালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা দেয়। যা বানভাসি মানুষদের বেঁচে থাকার একটা বড় অবলম্বন হিসেবে কাজ করে।
কেননা সেই সময় বানভাসি মানুষগুলো কাজকর্ম থাকে না। ঘরে খাবার থাকে না। চরম অর্থ কষ্ট দেখা দেয়। আর সেই সময়টা এই জালের সাহায্যে অসংখ্য বানভাসি মানুষ জীবিকা নির্বাহের কাজ সারেন যোগ করেন বাঁধ এলাকায় বসবাসকারী এসব ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮
এমবিএইচ/এসএইচ