ঢাকা, রবিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মফুলে কি আর পেট ভরে…

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১৮
পদ্মফুলে কি আর পেট ভরে… জলাবদ্ধতার কারণে বিলে পানি জমে পদ্মফুল ফুটে আকষর্ণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলেও এলাকাবাসী তা চান না

খুলনা: তেরখাদায় জলাবদ্ধ ভূতিয়ার বিলে পদ্মফুল দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসছেন। দিন যাচ্ছে আর পর্যটকদের ভিড়ে বিনোদনপ্রেমীদের প্রিয় স্পট হিসেবে রূপ নিচ্ছে ভূতিয়ার বিল। তাতে দর্শনার্থীদের মন ভরলেও এলাকাবাসীর পেট ভরছে না। 

‘পদ্মফুলে কি আর পেট ভরে। বিলে আমরা ধান চাষ করতে চাই।

দ্রুত জলাবদ্ধতার নিরসন চাই। আগের মতো সোনালী ফসলে মাঠ ভরা দেখতে চাই’।  

খুলনার তেরখাদা উপজেলার ভূতিয়ার বিল নিয়ে এমন অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন স্থানীয় পাতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা প্রফুল্ল কুমার মরু।  

রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) প্রবীণ এ মুক্তিযোদ্ধা ভূতিয়ার বিল নিয়ে বলেন, স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে ভূতিয়ার বিলের চারপাশের মানুষের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা ম্লান হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে ধান চাষ করতে পারছেন না কৃষকরা। পাঁচ বছর মেয়াদি কৃষিজমি পুনরুদ্ধার প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলায় এ বছরও ধান লাগানো সম্ভব হয়নি। ভূতিয়ার বিলের চারপাশের প্রায় ৪০/৫০ হাজার কৃষক পরিবার এখন নিঃস্ব প্রায়। তাদের সবারই কম বেশি ফসলি জমি আছে বিলটিতে। কিন্তু সারা বছরই জমির ওপর কোমর পানি জমে থাকায় চাষাবাদ হয় না। ফলে মাছ ধরাই তাদের জীবিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সে মাছও আগের মতো মিলছে না।

আটলিয়া গ্রামের সবুজ কুমার রায় বলেন, ১৮/২০ বছর আগে এ বিলে ইরি, বোরো, আউশ, আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদিত হতো। এখন কিছুই হয় না। পেটের দায়ে মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সবাই আশা করছিলো নদী খনন হলে আবার ভূতিয়ার বিলে ধান হবে। কিন্তু নদী খননের কাজ ধীরগতিতে হওয়ায় সে আশাও ম্লান হয়ে যাচ্ছে।  

এলাকার প্রবীণরা জানান, খুলনার তেরখাদা উপজেলা ও নড়াইল জেলার অংশ বিশেষ নিয়ে প্রাকৃতিকভাবে ভূতিয়ার বিলটির সৃষ্টি। ২০০৩ সাল থেকে বিলের ২০ হাজার একর জমি স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। ফসল উৎপাদনও বন্ধ হয়ে গেছে। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন বিলের ওপর নির্ভরশীল মানুষজন।

২০১১ সালে খুলনার এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিলের জলাবদ্ধতা দূর করার প্রতিশ্রুতি দেন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা (একনেক) থেকে ২০১৩ সালে একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। যার লক্ষ্য হলো, ভূতিয়ার বিলের স্থায়ী জলবদ্ধতার অবসান। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ৪৩ হাজার হেক্টর কৃষিজমি পুনরুদ্ধার করা। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। যা ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা।

জলাবদ্ধতার কারণে বিলে পানি জমে পদ্মফুল ফুটে আকষর্ণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলেও এলাকাবাসী তা চান নাএ প্রকল্পে ৩৩টি খালের ৮৯ কিলোমিটারসহ আঠারবেকি ও চিত্রা নদীর সাড়ে ৬৭ কিলোমিটার নদী খননের কথা, যা পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এর মধ্যে তেরখাদা অংশে ২৬ ও কালিয়া অংশে সাতটি খাল রয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ বর্তমানে চলমান।  

এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, তেরখাদা উপজেলার ‘দুঃখ’ হিসেবে পরিচিত ভূতিয়ার বিল। এই বিলের জলাবদ্ধতার কারণে কৃষিকাজ হচ্ছে ব্যাহত। যার প্রভাব পড়ছে এলাকার অর্থনীতি এবং সমাজ ব্যবস্থার উপর। যথাযথ উদ্যোগের অভাবে এই বিলের আশেপাশের গ্রাম যেমন পাতলা, নাচুয়ানিয়া, আদমপুর, নৌকাডুবি, আদালতপুর, আটলিয়াসহ ১০/১২টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিনের স্থায়ী জলাবদ্ধতার ফলে খুলনার তেরখাদা উপজেলার ভূতিয়ার বিল পাড়ের মানুষের প্রায় অনাহারে দিন চলছে। বিল তীরবর্তী এ উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের হাজারও পরিবার অভাবের তাড়নায় কাজের সন্ধানে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।  

এদিকে জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার মানুষের পেটে ক্ষুধা থাকলেও জলজ ফুলের রানি খ্যাত পদ্ম ফুটছে ভূতিয়ার বিলে। যা দেখতে প্রতিদিনই হাজারও পর্যটক ভিড় করছেন বিল এলাকায়।  

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিলটির পানি সরানোর কাজ যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। জলাবদ্ধতা রয়েই গেছে। কাজের নামে শুধু সরকারি টাকা অপচয় ও হরিলুট হচ্ছে।  

বিল এলাকার ৩ নং ছাগলাদাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ছাগলাদাহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম দ্বীন ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কৃষিজমি পুনরুদ্ধার প্রকল্পের নদী খননের কাজ খুবই ধীরগতিতে হচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কেবল মাত্র ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।  

তিনি জানান, তেরখাদা, ছাগলাদাহ ও সাচিয়াদহ এই তিন ইউনিয়নে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটার রয়েছেন। তারা সবাই জলাবদ্ধতা নিরসন চান। বিলে পদ্ম চান না, ধান চাষ করতে চান তারা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা,  অক্টোবর ০১, ২০১৮
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।