আবার কখনো পুলিশই জনভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে উচ্ছেদ করে হকার বা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের। কিন্তু কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হয় না এই ‘উচ্ছেদ অ্যাকশন’।
দখলবাজিতে রীতিমতো বিপর্যস্ত এমনই এক মোড়ের জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া। ময়মনসিংহ-ঢাকা চারলেন মহাসড়কের সূচনা পয়েন্ট ধরা হয় এ চরপাড়া মোড়কে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে বিস্তার করেছে দখলবাজদের ভয়ঙ্কর থাবা।
ফলে এ সড়ক দিয়ে দিন বা রাত কোনো সময়েই হেঁটে চলার জো নেই। দিনে দিনে বাড়ছে যানজট। ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। তবুও বিকার নেই দায়িত্বশীলদের।
রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করে স্থানীয় পথচারী, বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীসহ এই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে দুর্ভোগ-ভোগান্তির এ চিত্র উঠে আসে।
জানা যায়, প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দুই লেন থেকে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। শুরু থেকেই মহাসড়কের সূচনা পয়েন্ট চরপাড়া মোড়ে চলছে প্রকাশ্য দখলবাজি। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী দুই লেনের বেশিরভাগ দখল করে গড়ে ওঠেছে অবৈধ অটোরিকশা, মাহেন্দ্র ও অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডসহ দোকানপাট।
একই মোড়ে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহমুখী দুই লেন ফল, পান-বিড়ি-সিগারেট, শিশুদের পোশাক, চা স্টলসহ বিভিন্ন দোকানি বা হকাররা অবৈধভাবে গিলে খাচ্ছে। পৌরসভার নির্মিত ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে টঙ দোকান, মুদি দোকান নয়তো খাবারের হোটেল।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ‘ম্যানেজ ফর্মুলার’ জোরেই দিনের পর দিন তারা দিব্যি টিকে আছে দখলবাজিতে। আবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা ৭টার পর পর্যন্ত এ মোড়ের সারি সারি ওষুধের দোকান কিংবা ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে সড়ক দখলে রাখে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মোটরসাইকেল।
মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় বা পয়েন্ট দখল করে অন্যদের মতোই শিশুদের পোশাক নিয়ে বসেছেন ত্রিশাল উপজেলার বৈলর এলাকার মেঘা মিয়া (৫০)।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, ১০ থেকে ১২ দিন আগে পুলিশ একদিন হঠাৎ করে দোকান তুলে দিয়েছিল। এরপর দু’একদিন বসতে পারেননি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। পুলিশের কোনো বাধা নেই।
একই রকম তথ্য জানান ফল দোকানি সদর উপজেলার দাপুনিয়া এলাকার তুহিন (২৫) ও শহরের বাঘমারা এলাকার মায়া রানী (৪৫)। তারা বলেন, ‘পুলিশ কইলে উইঠ্যা যামু। ’
দেখা গেছে, এ সড়কের ফুটপাতও গেছে দখলবাজদের পেটে। এ নিয়ে রাজ্যের আক্ষেপ চরপাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মাসুদ কবিরের (৪০)।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ফুটপাত মানেই হাঁটার পথ। কিন্তু এখান দিয়ে হেঁটে চলারও জো নেই। সড়কের অবস্থা আরও কাহিল। অবৈধ সব কারবারে প্রতিনিয়ত নাকাল হতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, গত বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের ফুট ওভার ব্রিজ উদ্বোধন করতে এসেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রী আসায় আগের দিনই সব স্ট্যান্ড, টঙ দোকান ও খাবারের হোটেল উচ্ছেদ করায় ঝকঝকে একটি ভাব পেয়েছিল চরপাড়া মোড়ের এই সড়কটি।
মন্ত্রী যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই সড়কটি আগের দৃশ্যপটে ফিরে যায়। ‘এরপরও একইভাবে উচ্ছেদ-দখলের খেলা চলেছে, চলবেও’- টিপ্পনী কেটে বলেন শহরের আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী জুলফিকার ইসলাম।
তবে এসব বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে চরপাড়া মোড়কে জঞ্জালমুক্ত করা হয়েছিল। আবারও অবৈধ দখলদারদের সরাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৮
এমএএএম/জিপি/আরএ