সোমবার (১ অক্টোবর) প্রবীণ দিবস। এই দিনে এমন মন্তব্য করেছেন রাজধানীর সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবীণ নিবাসে থাকা বয়স্করা।
এ মন্তব্যের প্রকৃত কারণ জানতে চাইলে প্রবীণ নিবাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ষাটোর্ধ্ব এক নারী বাংলানিউজকে বলেন, আজকে প্রবীণ দিবস পালিত হচ্ছে। আমাদের নিয়ে অনেক অনুষ্ঠান হচ্ছে। এতে কি আমাদের কোনো সমস্যা দূর হচ্ছে? প্রবীণদের এই আবাসস্থলে অনেক সমস্যা রয়েছে। ছয় তলায় (প্রবীণ ও হিতৈষী সংঘের প্রবীণ নিবাস ভবনের) প্রবীণদের আড্ডা দেওয়ার জন্য একটি কমনরুম করা হয়েছে। যে রুমটিতে কমনরুম করা হয়েছে, সেখানে একজন নারী থাকতেন। তিনি এখন আর এখানে থাকেন না। আমাদের বক্তব্য ছিলো, একজনকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে কমনরুম করা ঠিক হবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তারপর আমরা তো দুর্বল ও প্রবীণ সর্বপরি মূল্যহীন।
এছাড়া সব জায়গায় কিছু দুষ্টু প্রকৃতির লোক থাকে। এখানেও এমন লোক আছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও কোনো লাভ হয় না। তাছাড়া আমরা ৪ হাজার টাকা প্রতি রুম ভাড়া ও শুরুতে ২০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে থাকি। এখন রুম ভাড়াকে ৫ হাজার ও জামানতকে ৩০ হাজার করার পায়তারা চলছে। অনেকের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলেও শুনেছি। অথচ আমাদের প্রতি কিছুটা সহানুভূতি দেখানো উচিত ছিলো। এতো বেশি ভাড়া নেওয়া উচিত নয়। আমরা সরকারি নজরদারির আশা করছি। আশফাকুন্নবী নামে আরেক সাবেক বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দেখার কেউ নেই। আমার পৈতৃক নিবাস ছিলো নোয়াখালীর মাইজদীতে। সেখানে আমার অল্পকিছু জমি ছিলো। তা বিক্রি করেই আমি এখানে থাকছি।
আমিনুর রহমান নামে সাবেক স্কুলশিক্ষক বলেন, এখানকার বেশির ভাগ বয়স্করাই অসুস্থ। আজকে যে প্রবীণ দিবস পালন করা হচ্ছে সে কারণে আমাদের ক্যান্টিনে খাবার রান্না হচ্ছে না। কারণ নিচে গিয়ে টোকেন দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে আমাদের খাবার নিতে হবে। যা আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর। তাহলে বলতেই হয়, দিবস কোনোভাবেই আমাদের জন্য ভালো নয়।
প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সমস্ত অসহায়ত্বকে তারা মেনে নিয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় বেঁচে আছেন। আবার অনেকে সামাজিকভাবে জীবন-যাপন না করে বর্তমানে অসহায়ত্বের কড়াল থাবায় পড়ে গেছেন। তেমনি একজন ময়মনসিংহ এলাকা থেকে আসা জুনায়েদ (৮২)। তিনি কথা বলতে পারেন না। শুধুমাত্র বোঝার শক্তিটুকু রয়েছে তার। তার সেবার জন্য ১৭ হাজার টাকা বেতন নিয়ে ২৪ ঘণ্টা সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন রফিকুল।
রফিকুল বাংলানিউজকে বলেন, জুনায়েদ সাহেবের বড় ভাই তার সমস্ত খরচ বহন করেন। তবে কেউ তাকে দেখতে আসেন না। তিনি কোনো কথা বলতে পারেন না। আকার ইঙ্গিতেও কিছু বোঝাতে পারেন না। এ অবস্থায় তার বাথরুমের কাজগুলো আমাকে এই বিছানা থেকেই পরিষ্কার করতে হয়। চিকিৎসার কাজও আমি করাই।
তবে জীবনের এমন পরিস্থিতিকে অনেকে মেনে নিতে পারেন না। তেমনই একজন বৃদ্ধা জামানা হক (৭৩)। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। আমার ছেলে-মেয়েদের মানুষ করতে গিয়ে আমাকে অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে। কারণ এক সময় আমাদের অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। কিন্তু আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার ছেলে-মেয়েরা আমাকে এখানে রেখে গেছে। যতোদূর জানি তারা গ্রামের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। আমি আমার স্বামীর পেনশনের টাকা দিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৮
এমএএম/আরবি/