ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘সোনালি ব্যাগ’ উৎপাদনে কারিগরি সহায়তায় চুক্তি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৮
‘সোনালি ব্যাগ’ উৎপাদনে কারিগরি সহায়তায় চুক্তি সমঝোতা স্মারক সই

ঢাকা: বাংলাদেশের বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত পাট থেকে পলিথিনের বিকল্প পচনশীল ‘সোনালি ব্যাগ’ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান ফুটামুরা কেমিক্যাল লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)।

বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার (০২ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়। বিজেএমসির পক্ষে করপোরেশনের সচিব একেএম তারেক এবং ফুটামুরার পক্ষে কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার গ্রিমি কোউলহার্ড চুক্তি সই করেন।

চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ৬-৯ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে ফুটামুরা বাণিজ্যিকভাবে পাটের সোনালী ব্যাগ উৎপাদন করবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। আর এজন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি।

পাট থেকে পলিথিনের বিকল্প আবিষ্কার করেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহম্মেদ খান, তিনি বর্তমানে বিজেএমসির উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। তিনি বলেন, সোনালী ব্যাগ দেখতে পলিথিনের মতোই হালকা, পাতলা ও টেকসই। পাটের সুক্ষ্ম সেলুলোজকে (সেলুলোজ- উদ্ভিদের একটি প্রধান গাঠনিক পদার্থ। উদ্ভিদের কোষ প্রাচীর সেলুলোজ দিয়ে গঠিত) প্রক্রিয়াজাত করে এ ব্যাগ তৈরি করা হয়। মাটিতে ফেললে সেই ব্যাগ পচে মিশে যায়। ফলে পরিবেশ দূষিত হবে না। এই ব্যাগ দামেও সাশ্রয়ী হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটের তৈরি ব্যাগের নাম দেন ‘সোনালি ব্যাগ’, জানান প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ১২ মে পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগ তৈরি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। বিজেএমসির তত্ত্বাবধানে পাটের তৈরি সোনালী ব্যাগ উদ্ভাবনের পাইলট প্রকল্প পর্যায়ে উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী ডেমরায় অবস্থিত লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে সোনালি ব্যাগ তৈরির প্রাথমিক পাইলট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে দেশীয় প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি মেশিনে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার ব্যাগ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।

তবে বৃহৎ পরিসরে নতুন উদ্ভাবিত সোনালী ব্যাগ তৈরিতে দেশে বিদেশে কোনো মেশিন তৈরি হয়নি। এ ধরনের মেশিন তৈরিতে বিভিন্ন দেশে যোগাযোগের পর ফুটামুরার সন্ধান পাওয়া যায়।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ তৈরির উদ্দেশ্যে পাট থেকে সেলুলোজ আহরণ করে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে অন্যান্য পরিবেশবান্ধব দ্রব্য মিশিয়ে কম্পোজিট করে এই ব্যাগ তৈরি করা হয়। উৎপাদিত ব্যাগে ৫০ শতাংশের বেশি সেলুলোজ বিদ্যমান। এই ব্যাগ দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই মাটির সঙ্গে মিশে যায়। এই ব্যাগের ভার বহন ক্ষমতা পলিব্যাগের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বেশি এবং পলিথিনের মতোই স্বচ্ছ হওয়ায় খাদ্যদ্রব্য এবং অন্যান্য গার্মেন্টস প্যাকেজিং হিসেবে ব্যবহারের খুবই উপযোগী।  

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এভাবে পাটের ব্যবহার বাড়লে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের পাশাপাশি অতীতের মতো বাংলাদেশ পাট দিয়ে সুপরিচিতি পাবে। উৎপাদিত ব্যাগের বর্তমান মূল্য পলিব্যাগের দ্বিগুণ হলেও বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেলে পলিব্যাগের প্রায় কাছাকাছি চলে আসবে। ফুটামুরার কারিগরি সহায়তায় বিজেএমসি থেকে সেলুলোজ উৎপাদনের মাধ্যমে সোনালী ব্যাগ প্রস্তুত ও বাজারজাত করে লাভবান হবে।

বর্তমানে পাট দিয়ে ২৮৫ ধরনের পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে জানিয়ে পাট প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্যিকভাবে পাটের পলিব্যাগ উৎপাদন শুরু হলে আমাদের দেশের সব পাট দিয়ে বিশ্বের চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ উৎপাদন করতে পারবো। এতে পাটের চাহিদা বেড়ে যাবে এবং কৃষক দাম পাবে।   

মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ফয়জুর নহমান চৌধুরী, বিজেএমসির চেয়ারম্যান ড. মো. মাহমুদুল হাসান, ফুটামুরার গ্রুপ ম্যানেজার মার্টিন রিচার্ড কক রফি, অপারেশন ম্যানেজার অ্যান্ডিউ জেমস ডাক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৮
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।