ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রাষ্ট্রপতি যেতে না যেতেই অন্ধকার-দুর্গন্ধ শহর!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৮
রাষ্ট্রপতি যেতে না যেতেই অন্ধকার-দুর্গন্ধ শহর! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নেত্রকোনা : সম্প্রতি (০৩ অক্টোবর, বুধবার) মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য নেত্রকোনা সফর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির এই সফরকে কেন্দ্র করে নড়েচড়ে বসেছিল জেলার প্রায় সবকটি দপ্তর। ফলে সাজানো গোছানো আর পরিপাটি নতুন এক রূপ পেয়েছিলো নেত্রকোনা শহর।

নিজ শহরকে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন দেখতে পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত হয়েছিলো শহরবাসী। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত ভবনও রঙের আলপনায় সাজানো হয়েছিলো বেশ মনের মতো করে।

এতে আশান্বিত হয়েছিল নেত্রকোনার মানুষ। কিন্তু এ কি রাষ্ট্রপতি ওইদিন সন্ধ্যায় শহর ছেড়ে যেতে না যেতেই পুরনো সেই রূপ ফিরে পেলো নেত্রকোনা! নিভে গেলো যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম প্রাণকেন্দ্র শহর মোক্তারপাড়া এলাকার মগড়া নদীর উপর নবনির্মিত ব্রিজের সড়ক বাতিগুলো!

অন্ধকার হয়ে পড়লো শহরের প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম মগড়া নদীর পুরো ব্রিজটি। যদিও বাতিগুলো রাষ্ট্রপতি আসার ঠিক আগমুহূর্তে জ্বালানো হয়েছিলো তড়িঘড়ি করে। তারআগেও ব্রিজটি নির্মাণ হওয়ার পর থেকেই গুটগুটে অন্ধকার।

রাষ্ট্রপতি আসার আগমুহূর্ত ও থাকাকালীন সময়ে চাইলেও কোনো নাগরিক শহরের সড়কে কোথাও উচ্ছিষ্ট ফেলতে পারেননি। পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দেখা গেছে চব্বিশ ঘন্টার ব্যস্ততা। প্রাকৃতিকভাবে বাতাসে গাছের একটি পাতা পড়ে সড়ক ময়লা হলেও নিমিষে পরিষ্কার করে দিয়েছেন তারা।

অথচ রাষ্ট্রপতি চলে যাবার পরপরই নাগরিকরা পরিচ্ছন্ন শহরকে করে দিলেন নোংরা। চলাচলের মূল সড়কে ফেলতে শুরু করলেন বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা আবর্জনা! আর তা এখন পরিষ্কার করার জন্যও তৎপরতা নেই কোনো পরিচ্ছন্ন কর্মীর। শিশু থেকে শুরু করে প্রত্যেক নাগরিকরা চলতে শুরু করেছেন আবারও নাকে হাত দিয়ে।

যানবাহন চলাচলে আনা হয়েছিলো শিথিলতা কিন্তু রাষ্ট্রপতি চলে গেলেন শুরু হলো আবারো যানজট! বৈধ-অবৈধ সব যান শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ঠিক আগের মতো। এসবের ফলে শুরু হয়েছে আবারো নাগরিক দুর্ভোগ। যে যান চলাচলের সুবিধার জন্য সড়কে থাকার কথা আজ সেই যানগুলো সবচাইতে দুর্ভোগ ও অসুবিধার একমাত্র কারণ।

শহরের এতো সাজসজ্জা দেখে বাংলানিউজে নিজেদের আনন্দের অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন আইনজীবী নূর ই এলাহি খান ও মানবেন্দ্র বিশ্বাস উজ্জ্বল। কিন্তু শহর অন্ধকার ও দুর্গন্ধে পুরনো রূপ ফিরে পাওয়ায় এবার ক্ষোভও ঝাড়লেন তারা।

বাংলানিউজে এই আইনজীবীরা বলেন- ভালো শহরে থাকার সৌভাগ্য আমাদের নেই। যে পর্যন্ত মন থেকে নিজেদেরকে না সাজাতে পারবো ততদিন শহর পরিচ্ছন্ন হবে না। মূলত বিশেষ চাপে না পড়লে কোনো দফতর নিজেদের দায়িত্ব পালন করে না।

জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল আওয়াল শাওন, সদস্য ওমর সাইফুল্লাহ্ ও উদীচীর প্রচার সম্পাদক সঞ্জয় সরকার হীরা।  

বাংলানিউজকে তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে জেলার মোক্তারপাড়া শহরের মহুয়া অডিটোরিয়ামটি পরিত্যক্ত। ভূতুড়ে এক ভবন হয়ে আছে ভিতরে বাহিরে। জরাজীর্ণ ভবনটির ভিতরে সময় সুযোগে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে নেশার আড্ডা ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড। যা দেখার কেউ নেই, যে যার মতো করে খুলে নিয়ে যাচ্ছে ইট থেকে শুরু করে দরজা জানালার গ্রিল!

সেই পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ অডিটোরিয়ামটির ভিতরে যেমই হোক না কেন রাষ্ট্রপতির সফরকে কেন্দ্র করে রঙ-তুলির আঁচড়ে বাহিরের দেয়ালগুলো পেয়েছিলো নতুন রূপ। এখন আবারও দিনদুপুরে আর রাতের আঁধারে বকে যাওয়াদের দখলে!

দায়িত্বশীল ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আর সাজানো একটি শহর প্রত্যাশা নাগরিকদের। প্রত্যেকে চান শুধু কারো আসা বা সফরকে কেন্দ্র করে নয় সবসময় সুন্দর আর বসবাস যোগ্যভাবে থাকুক নেত্রকোনা।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৩ ঘণ্টা, ০৫ অক্টোবর, ২০১৮
এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।