ঢাকা, শনিবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শত কোটি টাকা দেনার ভার নিতে যাচ্ছেন লিটন 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৮
শত কোটি টাকা দেনার ভার নিতে যাচ্ছেন লিটন  সাজানো হয়েছে মেয়র লিটনের দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানস্থল-ছবি-বাংলানিউজ

রাজশাহী: অপেক্ষার প্রহর শেষ। শুক্রবার (৫ অক্টোবর) দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন রাজশাহীর নগরপিতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ১০১ কোটি টাকা ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) পঞ্চম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি।

শুক্রবার (৫ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় এজন্য বিশাল আয়োজন করা হয়েছে।  

এর আগে ২০০৮ সালে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

২০১৩ সালের নির্বাচনে মেয়রের মসনদ হারিয়েছিলেন তিনি। বলা হয়, এই পাঁচ বছর ছিল রাসিকের স্বর্ণযুগ। এই পাঁচ বছরে গ্যাস সংযোগ, রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন ও সুসজ্জিত আধুনিক রাজশাহী গড়ার কারিগর ছিলেন জাতীয় নেতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের ছেলে খায়রুজ্জামান লিটন।
 
গত ৩০ জুলাই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভের পর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুক্রবার রাজশাহী সিটি মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালাখ্যাত মেয়র লিটন।  

এ উপলক্ষে বর্ণিল হয়ে উঠেছে রাজশাহী নগর ভবন। অনুষ্ঠানস্থল নগর ভবনের গ্রিন প্লাজাও সাজানো হয়েছে রাজসিকভাবে। রাজশাহীর সব সংসদ সদস্য, বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দায়িত্ব নেবেন লিটন।  

রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোমিন বাংলানিউজকে জানান, মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে বরণ করতে নগর ভবন এখন প্রস্তুত। বিকেল ৩টায় নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় মেয়রের অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এজন্য সাজানো হয়েছে পুরো নগর ভবন।  

সাজানো হয়েছে নগর ভবন-ছবি-বাংলানিউজএক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলছে সাজসজ্জার কাজ। মেয়রকে স্বাগত জানিয়ে উড়ানো হয়েছে ৯ ফুট ব্যাসার্ধের বিশাল বেলুল। শুধু বেলুন নয়, পুরো নগর ভবনই সেজেছে অপরূপ সাজে। সন্ধ্যার পর লাল, নীল, সবুজ আর হলুদ আলোর বর্ণালিতে রঙিন হয়ে উঠছে গোটা নগরভবন এলাকা। মূল ভবনের পাশেই তৈরি করা হচ্ছে অস্থায়ী টেন্ট। প্রায় আড়াই হাজার মানুষ এখানে বসতে পারবেন।  

জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, টেন্টটি নির্মাণ করছেন ঢাকার রিফ্লেক্ট বাংলা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। প্রায় ১৫ হাজার স্কয়ার ফিটের এই টেন্টটিতে রয়েছে ২শ’ টনের ৪০টি এসি। রয়েছে ৬০টির মতো বড় স্ট্যান্ড ফ্যান। লাইটিং, সাউন্ড সিস্টেম, সোফা, চেয়ার সবকিছুই ঢাকা থেকে আনা হয়েছে। রয়েছে বর্ণিল আলোকসজ্জার ব্যবস্থা।  

রাসিকের ইতিহাসে এমন জাঁকজমক আয়োজন এবারই প্রথম বলে জানান এই কর্মকর্তা।
 
এদিকে, দায়িত্ব গ্রহণের আগে নবনির্বাচিত মেয়র লিটন বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৩ সালে দায়িত্ব ছাড়ার সময় উদ্বৃত্ত রেখে এসেছিলাম। কিন্তু গত ৫ বছরে দেনায় পড়েছে সিটি করপোরেশন। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের দেনা প্রায় ১০১ কোটি টাকা। গতবারের আমার অভিজ্ঞতা, পুনরায় নির্বাচিত কাউন্সিলরদের অভিজ্ঞতা ও নতুনদের কাজ করার উদ্যোম- সব মিলে আশা করছি আগামী ছয় মাসের মধ্যে সিটি করপোরেশনের সব দায়-দেনা পরিশোধ করবো।

মেয়র লিটনের দায়িত্ব গ্রহণের অনুষ্ঠানস্থল-ছবি-বাংলানিউজখায়রুজ্জামান লিটন আরও বলেন, ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার একান্ত আলাপ হয়েছে। তাকে আমি অনুরোধ করেছি রাজশাহীর উন্নয়নে অনেকগুলো প্রকল্প অনুমোদন দিতে, যেগুলো একসঙ্গে আমি পাঠাবো। তিনি বলেছেন, রাজশাহীর উন্নয়নে প্রকল্পের কোনো অভাব হবে না।  

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী আবারও ক্ষমতায় আসবেন। কারণ উন্নয়ন করতে হলে, উন্নয়ন চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প সময়-সাময়িক বাংলাদেশে কেন, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেও দেখা যাচ্ছে না।  

নগরভবনে দলবাজি চলবে না জানিয়ে মেয়র লিটন বলেন, বিগত সময়ে নগরভবনে দলবাজি করতে দেইনি, আগামীতেও নগরভবনে কোনো দলবাজি কাউকে করতে দেওয়া হবে না। সংসদ সদস্য বাদশাসহ আমরা সবাই হাতে হাত রেখে একজোট হয়ে রাজশাহীর কল্যাণে কাজ করবো। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে পথ চলতে চাই।

১৯৮৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাজশাহী পৌর করপোরেশন সিটি করপোরেশনে পরিণত হয়। তখন প্রথম মেয়র মনোনীত হন আব্দুল হাদি।  ১৯৯০ সালের ১৬ এপ্রিল রাসিকের মেয়রের দায়িত্ব পান দুরুল হুদা। একই বছরের ৬ নভেম্বর মেয়র পদে মনোনীত হন মেসবাহ উদ্দীন আহম্মেদ।  

এর এক মাস পরেই রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার সাইদুর রহমান মেয়র মনোনীত হন। ১৯৯১ সালের ৮ মে দায়িত্ব নেন বিভাগীয় কমিশনার এনএ হবিবুল্লাহ। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে একই সালের ২১ মে মেয়র মনোনীত হন মিজানুর রহমান মিনু। পরে ১৯৯৩ সালে মেয়র মনোনীত হন বিভাগীয় কমিশনার এম আমিনুল ইসলাম। এরপর রাসিকের মেয়র হন বিএনপির হেভিওয়েট নেতা মিজানুর রহমান মিনু। তার নিকটম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

১১ মার্চ ১৯৯৪ থেকে ২৮ মে ২০০২ পর্যন্ত রাজশাহীর নগরপিতার দায়িত্ব পালন করেন মিনু। পরবর্তী নির্বাচনেও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশাকে হারিয়ে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হন মিনু। ২৯ মে ২০০২ থেকে ১১ জুলাই ২০০৭ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন মিনু।  

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউন নবী দুদু। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো রাজশাহীর নগরপিতা নির্বাচিত হন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮ থেকে ৯ মে ২০১৩ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৩ সালে আবারও লিটন-বুলবুলের লড়াই হয়। সেবার প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।  

বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৮
এসএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।