ঢাকা, শনিবার, ৩ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মজুরি ছাড়াই কাজ করেন ৫৪ লাখ নারী

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৮
মজুরি ছাড়াই কাজ করেন ৫৪ লাখ নারী রাতদিন ঘরের কাজ করলেও তার জন্য নারীদের নেই মজুরি (প্রতীকী ছবি)

ঢাকা: মিরপুর-আগারগাঁও এলাকার জনতা হাউজিংয়ের বাসিন্দা সানজিদা হক কবিতা (২৭)। পেশায় গৃহিনী। স্বামী আমিরুল হকের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে (বিসিসি) একটি দোকান রয়েছে। এই দম্পতির দুই মেয়ে সানজিদা লামিয়া (১১) ও সুমাইয়া বিনতে সাম্মা (৬)। লামিয়া মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করে। দুই মেয়ে ও সংসারের সব কাজই দুই হাতে সামলান কবিতা।

কাকডাকা ভোরে রান্নার মধ্য দিয়ে দিন শুরু হয় কবিতার। চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।

কবিতার মতো দেশে এমন কয়েক লাখ নারী পরিবারের সচ্ছলতার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেন। যার নেই কোনো আর্থিক মূল্য।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত সর্বশেষ চূড়ান্ত শ্রমশক্তি জরিপে উঠে এসেছে, দেশের ৫৪ লাখ নারী মজুরি ছাড়াই রাতদিন পরিশ্রম করেন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, নারীরাই মজুরি ছাড়া বেশি কাজ করেন, নানাভাবে আমাদের সহায়তা করেন। কৃষি, দোকানেও নারীরা সহায়তা করেন। তবে এসব কাজে নারীদের একটা মজুরি ধরা দরকার। গৃহস্থালি কাজে নারীরা সব সময় আমাদের সহায়তা করে আসছেন কোনো মজুরি ছাড়াই।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকেই ৬ শতাংশের উপরে আছে প্রবৃদ্ধির হার। বৃদ্ধি বাড়ছে তবুও বাড়ছে না কর্মসংস্থান। বরং দিনকে দিন কমছে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে দেশে কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৪ শতাংশেরও বেশি।  
 
এমনকি দেশে ৭২ লাখ মানুষ আছে যারা কাজ করেন অথচ কোনো মজুরি পান না। গৃহস্থালি, কৃষি, মুদি দোকান ও অথবা বাবা-মার ব্যক্তিগত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৭২ লাখ মানুষ কাজ করেন কোনো মজুরি ছাড়াই।

সূত্র জানায়, মজুরি ছাড়াই কর্মের মানুষের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৫৪ লাখ এবং পুরুষের সংখ্যা মাত্র ১৮ লাখ। সুতরাং কর্মের ক্ষেত্রে দেশে নারীরা বেশি অবহেলিত। তারা কাজ করেন অথচ মজুরি থেকে বঞ্চিত। তবে এই সংখ্যা অন্য বছরের তুলনায় এবার কম।
 
২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে মোট আনপেইড ফ্যামিলি হেলপার ছিলো ৮৬ লাখ, এর মধ্যে নারী ৬৭ লাখ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিলো আরও ভয়াবহ ১ কোটি ৬ লাখ, এরমধ্যে নারী ৮৪ লাখ। ২০১০-১১ অর্থবছরে আনপেইড ফ্যামিলি হেলপার ছিলো ১ কোটি ১৮ লাখ, এরমধ্যে নারীর সংখ্যা ৯১ লাখ।
 
দেশে বর্তমানে মোট কর্মক্ষম মানুষ ৬ কোটি ৩৫ লাখ, এরমধ্যে নারী ২ কোটি। এরমধ্যে সরকার দাবি করছে তারা ৬ কোটি ৮ লাখ মানুষকে কাজ দিতে পেরেছে। এর মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে ২ কোটি ৪৭ লাখ, শিল্পে ১ কোটি ২৪ লাখ এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৩৭ লাখ মানুষ কাজ পেয়েছেন।  
 
এ প্রসঙ্গে নারীনেত্রী খুশি কবির বলেন, ‘দেশে আনপেইড ওয়ার্কার মানেই যেন নারী। আমরা বার বার দাবি জানিয়ে আসছি নারীরা যেন সঠিকভাবে মজুরি পায়। বাইরে কাজ করলে যেন সঠিক মজুরি পায়। আমরা দেখেছি, নারীদের মজুরিকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। নারীরা ঘরে অনেক কাজ করেন, এসব কাজেরও একটা মূ্ল্য আছে এগুলো নির্ধারণ করা দরকার। ’
 
তিনি আরও বলেন, ঘরের কাজের অবশ্যই মূল্য আছে। এটা বের করলে নারীর মর্যাদা আরও বেড়ে যাবে। আমরা এখনও দেখি কৃষিকাজে পুরুষ কাজ করলে সেটার মূল্য ধরে অথচ নারীর বেলায় ধরা হয় না। অনেক নারী পেটভাতায় কাজ করেন। এর ফলে বৈষম্য বেশি হচ্ছে। ঘরের ভেতরে নারী যেসব কাজ করেন এর মূল্য বের করতে হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৮
এমআইএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।